পতিত জমির অধিক লাভজনক ফসল সরিষা


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৪, ২০২৩, ১২:২৫ PM
পতিত জমির অধিক লাভজনক ফসল সরিষা

ফুলবাড়িয়া : ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। কৃষকরা এটিকে পতিত জমিতে ফাও এবং অধিক লাভজনক ফসল হিসাবে বিবেচিত করছে। এ বছর বাম্পার ফলনে কৃষকরা যেমন খুশি কৃষি বিভাগও তেমনি ফুরফুরে। কারণ সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে সরকার ইতিমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নিয়মিত ট্রেনিং ও উঠান বৈঠকের ফলে সরিষার আবাদ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি কৃষি বিভাগের টার্গেটও পূরণ হয়েছে অনেক বেশি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একটি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়নের ৪০ টি ব্লকেই সরিষার আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে কুশমাইল ও পুটিজানা ইউনিয়নের পাটুলী ব্লকের কৃষকরা বেশি পরিমাণে সরিষা চাষ করেছে। গেল বছর হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার সরিষার আবাদের প্রতি নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। গত বছর ফুলবাড়িয়া উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭৫ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ৯৮৫ হেক্টর নির্ধারণ করা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ১৩৮৫ হেক্টর। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিবিড় পরিচর্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জন সম্ভব হয়েছে। গত বছর ২ হাজার কৃষক প্রণোদনার আওতাভুক্ত ছিল এ বছর তা বেড়ে ৪ হাজারের বেশি করা হয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরিষা আবাদ কৃষকের জন্য একটি ফাও ফসল। সরিষার পুরো অংশই কৃষকের কাজে লাগে। সরিষার শাক ও ফুল অনেক মজাদার খাবার। মাড়াই করার পর উচ্ছিষ্ট অংশটুকু জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এ থেকে পাওয়া খৈল ফসল ও গরুর খাবার হিসাবে কাজে লাগে। সরিষা চাষ করা জমির মাটি অনেক উর্বর জৈব সারও তুলনামুলক কম প্রয়োগ করতে হয়। ফলে বোরো আবাদে বেশি ফলনে সহযোগিতা করে। সরিষার ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভজনক ফসল এটি। তবে সরকার কর্তৃক সরিষার প্রণোদনা বীজ আমন ফসল ঘরে উঠার আগেই কৃষকের হাতে পৌঁছালে বোরো আবাদে কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানান কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা আবাদ করলে জমির মাটি উর্বর থাকে ফলে কৃষকের ফলন ভালো হয়। উঠান বৈঠক, সভা, সেমিনারে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করার পাশাপাশি সেচ ম্যানেজারদের সাথে সমন্বয় করেই আমরা সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পূরণে সক্ষম হয়েছি। কেননা যেখানে সরিষার আবাদ বেশি সেখানে বীজতলা দেরিতে তৈয়ার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও টরি ৭, বারি ১৪, বীনা ৯ সহ কয়েক জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
কৃষক আশরাফুল জানান, গত বছর ৩ একর জমিতে সরিষা চাষ করলেও এবার ৪ একর আবাদ করেন। তার মতে, পতিত জমিতে কম খরচে অধিক লাভজনক ফসল এটি। এ ফসল উৎপাদনে খরচ একেবারে নাই বললেই চলে।
কৃষক সোহেল বলেন, অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা আবাদে তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ ও মাড়াই করে ফসল ঘরে তোলার জন্য পরিবারের পুরুষের পাশাপাশি নারী, বৃদ্ধ ও শিশু সদস্যরাও নিয়মিতভাবে কাজ করেন। রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বিক্রি করতে পারলে সরিষার বাজারদর আরও বেশি পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব-আল-রানা বলেন, মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সরিষায় ৪০ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় আমার টিম কাজ করছে। চলতি বছরে ফুলবাড়িয়াতে ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প খরচে বেশ লাভবান হয়ে থাকবেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা চাষিরা।

https://www.bkash.com/