তদন্ত কমিটির মুখোমুখি আবদুস সোবহান, বের হয়ে যা বললেন


প্রকাশের সময় : মে ৮, ২০২১, ৮:২১ PM
তদন্ত কমিটির মুখোমুখি আবদুস সোবহান, বের হয়ে যা বললেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অবৈধভাবে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আবদুস সেবহান। সেই নিয়োগের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবদুস সোবহানসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এম আবদুস সোবহান। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের পর ২০২১, এই ৮ বছরে কোনো নিয়োগ হয়নি। আমরা নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম, হঠাৎ করে এর মধ্যে করোনা চলে আসে। আমরা তখন নিয়োগ বন্ধ করে দিই। এরপর ক্যাম্পাসে গুঞ্জন শোনা যায় কিছু শিক্ষকের মুখে, তারা বলতে থাকে যে এ নিয়োগ দেওয়া যাবে না, মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা আসবে। সেটা অবশেষে সত্য হলো। ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ সকালে আমার কাছে ইমেইল আসে।আমি বিষ্মিত হলাম। যারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছিল তারা কীভাবে জানল যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে? গুঞ্জনটা সত্যে পরিনত হলো, আমি তাদের বলেছি এই কথা। আমরা যখন ভাইভা নিব তখন নিষেধাজ্ঞা আসে। কোভিডের জন্য স্থগিত রাখি।’

আবদুস সোবহান সাবেক উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য শুধু এ নিয়োগ না, আরও নিয়োগ না দিলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু কিছু শিক্ষক শুরু থেকেই বিরোধিতা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার, স্বাভাবিক কাজকর্ম চলতে না দেয়ার৷ সেটাকে এনকারেজ করা হয়েছে, আমি বলেছি তাদের একথা। যখনই কোনো অভিযোগ এখানে থেকে গিয়েছে, সেটার সত্যতা না জেনেই। আমার সাথে কথা না বলেই। আমাকে ডেকে বলতে পারতো এই এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার আপনার বক্তব্য কী? তদন্ত কমিটি করেছে আমার সাথে কোনো কথা নাই।

মানবিক কারণে নিয়োগ দিয়েছেন জানিয়ে সদ্য সাবেক এ উপাচার্য বলেন, ‘এখানে যারা এ নিয়োগটা ডিজার্ব করে তারাই পেয়েছে। আমি মানবিক কারণে, জীবনযাত্রা তাদের ব্যাহত হচ্ছিল। কারণ তাদের প্রত্যেকেই অনার্স-মাস্টার্স পাস। তারা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির একটা চাকরি করবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি মনে করি এটা যৌক্তিক। তারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান তাদের ক্রমাগত দাবি ক্রমাগত চাপ আমি মানবিক বোধ করেছি তাদের চাকরি পাওয়া উচিত। তাদের চাকরি দিয়েছি কেউ আমাকে বলেনি।’

নিয়োগে আইনি বাধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ এর ১২ (৫) ধারা অনুসারে নিয়োগ হয়েছে। এ বিষয়ে অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা আসলে সেটি বাতিল হওয়া উচিত। কারণ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট আইন আছে।  আগের ৫৪০ নিয়োগ ও বিভিন্ন মাস্টারোল নিয়োগ টিকে আছে। আমি মনে করি এটি যৌক্তিক তাই নিজ দায়িত্বে দিয়েছি। এটি না টেকার কোনো কারণ দেখি না।’

তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউজিসি যে তদন্ত কমিটি করেছে আমরা সে তদন্তে এখানে এসেছি। আমরা চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষা এবং গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। আমরা চেয়েছি স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রনালয়ে জমা দিতে পারি। এর জন্য আমরা এরসাথে সকলের সঙ্গে কথা বলেছি, সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আমরা বিষয় গুলো বিশ্লেষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিব। আশাকরি নিদিষ্ট সময় আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারব।’

এ আরও উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।

প্রসঙ্গত, ৬ মে উপাচার্য তার মেয়াদের শেষ দিনে নিয়োগ দেন ১৪১ জনকে। বিতর্কিত সে নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে সেদিন সন্ধ্যায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ তদন্ত কমিটি ক্যাম্পাসে এসে বৈঠক করেন বর্তমান, সাবেক উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ও নিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত সকলের সঙ্গে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ মে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান এম আবদুস সোবহান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে-জামাতাকে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জাড়ি করেছিলেন।সূত্র : আমাদের সময়

https://www.bkash.com/