করোনাকালীন ও দুর্যোগের ঈদ – ওবায়দুর রহমান


প্রকাশের সময় : মে ২৭, ২০২০, ৬:৩৪ PM
করোনাকালীন ও দুর্যোগের ঈদ – ওবায়দুর রহমান

ঈদ যতটুকু ধর্মীয়ভাবে উদযাপিত হয়, ততটুকুও সামাজিক উৎসবেও হয়ে থাকে। ঈদ মানেই আনন্দ, দান-খয়রাত, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন। এই বছরের ঈদ কেমন হলো ? বলতে হবে মোটেও ভালো কাটেনি। ঈদের যে চিরাচরিত উচ্ছ্বাস থাকার কথা তার কোনটাই ছিলো না। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবেলায় বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও প্রায় ৭০ দিনের লকডাউনের মাঝে ঈদ উদযাপিত হয়। চলমান বিপর্যয়ের কারণে আনন্দ-বেদনা, দুুঃখ-কষ্ট, অর্থনৈতিক সংকট, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান এসব কিছুর মধ্যেই দিনাতিপাত চলছে। এ দেশের খেটে-খাওয়া লোকজনের ছিলো না কোন ধরণের আনন্দ, কেবল তাদের মধ্যে এক ধরণের শঙ্কা কাজ করছে কবে স্বাভাবিক হবে এই পরিস্থিতি। ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা এই ঈদের আগে অর্থাৎ রমজান মাসেই তাদের একটু বেশি ব্যবসা হয় যা দিয়ে নিজেদের পরিবারের বাৎসরিক কেনাকাটার চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু এই বৎসর তার সুযোগ ছিলো না। পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরাও ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের তৈরি পোষাক বিক্রি করে লাভবান হয় ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বোনাস প্রদান করে থাকে কিন্তু এই দুর্যোগে তাদের সব বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সরকার তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, সেই সরকারি প্রণোদনার কতটুকু গার্মেন্টস মালিকরা পেয়েছে বা শ্রমিক-কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে তা সন্দেহাতীত কারণ ঈদের আগ মুহুর্তেও কিছু কিছু গার্মেন্টস কর্মীকে রাস্তায় আন্দোলন করতে দেখা গেছে। সারাদেশে রিক্সাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, ইজিবাইক চালক, পরিবহন শ্রমিক রয়েছে লক্ষ লক্ষ। তারাও দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে অবরুদ্ধ রয়েছে। তাদের কোন কাজ নেই, টাকা নেই, নেই কোন বেতন-ভাতাদিও। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ, ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণ প্রদান করলেও তা ছিলো অপর্যাপ্ত। ছিলো না তাদের সঠিক উপায়ে বিতরণের কোন কৌশল।

অন্যদিকে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে উপকূল এলাকাসহ কুষ্টিয়া, যশোর অঞ্চল পর্যন্ত লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে দেখা যায় খুলনার কয়রার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ১১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়, এইসব গ্রামের মানুষজন কোমড় পানির মধ্যেই নামায পড়েছে, উপজেলা প্রশাসনের রান্না করা সেমাই খেয়েই নিজেদের জীবনে ঠিকে থাকার লড়াইয়ে নামতে হয়েছে, বেড়িবাঁধ মেরামতে।

জীবন বাঁচাতে সরকারি নিষেধাজ্ঞামতে সামাজিক বা শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের মাঠে নামাজ না পড়ে মসজিদে নামাজ পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি এই ঈদে ছিলো না চিরায়ত কোলাকুলি, হাত মেলানো। বিশ্বব্যাপী এই সংকট, অমানিশার অন্ধকার দূর হয়ে আলো জ্বলমলে রোদ্দুর উঠবেই প্রত্যাশা রইলো।

https://www.bkash.com/