সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
ফুলবাড়ীয়া নিউজ 24 ডটকম : ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বর্তমানে দেশে ক্রান্তিকাল চলছে দাবি করে খালেদা জিয়া দেশ ও জাতির স্বার্থে সংকট উত্তরণে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে সরকারকে একটি জাতীয় সংলাপের দাবি জানান। এরপর শেখ হাসিনা সংলাপের জন্য দুইশর্ত দেন।
যুদ্ধাপরাধের যে বিচার হচ্ছে, তা সঠিক হচ্ছে। যেদিন উনি বলবেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত তখনই সংলাপ হবে। আবর সৈয়দ আশরাফ বলেন, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করে গঠনমূলক রাজনীতি করলেই সংলাপ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপিসহ তাদের জোট শরিকরা। তাদের ধারণা, ক্ষমতাসীনরা এতদিন সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে এলেও সেই অবস্থান থেকে তারা কিছুটা সরে আসছেন। সংকট নিরসনে উভয় পক্ষ আন্তরিক হলে জামায়াত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করেন তারা।
জোট নেতারা বলেছেন, জামায়াতকে নিয়ে বড় দুটি দল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত। দেশের স্বার্থের চেয়ে উভয়েই নিজ নিজ রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে। তবে সংলাপের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলকেই এই ব্যাপারে ছাড় দিতে হবে।
দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে নানামুখী চাপে আছে বিএনপি। দলের ভেতরে এবং বাইরের এই চাপ দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তবে এখনও দলটির সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এতদিন তিনি সংলাপ প্রত্যাখ্যান করলেও সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। শর্ত দিয়ে হলেও তিনি সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে বরফ গলা শুরু হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জোটের আরেক শরীক বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ হতেই হবে। তবে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রী জামায়াত ছাড়ার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা রাজনৈতিক কৌশল। কারণ এর আগে তিনি বলেছেন, হরতাল অবরোধ বা সন্ত্রাস বন্ধ করলেই সংলাপ হতে পারে। আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি কই সংলাপ তো হয়নি। কে রাজনীতি করবে আর কে করবে না এসব শর্ত দিয়ে কখনও সংলাপ হয় না।
সংকট নিরসনে খালেদা জিয়ার সংলাপ আহ্বানের জবাবে তাকেই দুটি শর্ত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। শর্ত হিসেবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আপনি দেশে ফিরে গঠনমূলক রাজনীতি করবেন, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করবেন, তাহলেই সংলাপ সম্ভব।’
সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের ৬৫তম জম্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সৈয়দ আশরাফ এই শর্ত দেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ না থাকলে কোনো আলোচনায় ফলপ্রসূ হয় না। যুদ্ধের সময় কোনো আলোচনা হয় না। আমরা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সাধারণ নির্বাচন চাই।’
আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতিতে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা থাকতে হবে। সব দরজা বন্ধ করে রাজনীতি চালানো সম্ভব নয়। আশা করি খালেদা জিয়ার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তিনি গঠনমূলক রাজনীতিতে ফিরে আসবেন। তবেই আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’
তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হবে। সে নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দুই শর্ত
এর আগে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দুই শর্তসংলাপে বসার সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য দু’টি শর্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে শর্ত দু’টি দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) বলুক- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সমর্থন করেন। উনি বলুক- যুদ্ধাপরাধের যে বিচার হচ্ছে, তা সঠিক হচ্ছে। যেদিন উনি বলবেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত, সেদিন উনি সংলাপে বসার যোগ্যতা অর্জন করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে সে কথাটা আনান ওনার মুখ থেকে, তাদের (জামায়াত) সঙ্গ ছাড়তে বলেন। তারপর ভেবে দেখা যাবে।
সংলাপে নিজের আন্তরিকতার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যার হাতে মানুষ পুড়ে, তার সঙ্গে বসার কোন ইচ্ছা আমার নেই। আমি অনেক টলারেট করেছি। রাজনীতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এদের সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন করা ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর গুলশানের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে না দেয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি কারো বাড়িতে গেলে, সে যদি আপনার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কি আপনি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন? উনার ছেলে মারা গেল তখন আমি গেলাম, উনি ঢুকতে দিলেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি রাজনীতি করি, আমরা একটা দল আছে, দেশ আছে। নির্বাচনের আগে অফার দিয়েছিলাম, আসেন সর্বদলীয় সরকার গঠন করি। উনি কি এসেছিলেন? তার উত্তর কি দিয়েছিলেন? যখন সত্যিকারভাবে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করার সুযোগ এসেছিলো তখন সাড়া দেয়নি।
সূত্র- আমাদের সময়