মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন
ফুলবাড়িয়া নিউজ 24ডটকম : আরাফার ময়দান। লাখ লাখ মুসলিম নর-নারীর কণ্ঠে একই ধ্বনি- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে সবার ফরিয়াদ- হে মাওলা, বান্দা হাজির, পাপীকে ক্ষমা করো!
গতকাল রোববার ছিল আরাফার দিন। সাদা কাপড়ে হাজিরা সারাদিন ছিলেন ওই ময়দানে। প্রত্যাশা- পাপমুক্ত হয়ে রাসুল (সা.) প্রদর্শিত সিরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথে হাঁটবেন তারা বাকি জীবন। সেখানে ভেদাভেদ ছিল না ধনী-গরিবের, কালো-সাদায়; সবাই ছিলেন আল্লাহপ্রেমী।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন এমন কোনো দিবস নেই, যেদিন আল্লাহ তায়ালা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন। আল্লাহ নিকটবর্তী হন এবং তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, তারা (হাজিরা) কী চায়? [মুসলিম শরিফ]
অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) জানান, আল্লাহ তায়ালা আরাফায় অবস্থানরতদের নিয়ে ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো আর ধুলায় ধূসর হয়ে। [মুসনাদে আহমাদ]।
আরাফাতের ময়দান দোয়া কবুলের স্থান। এখানেই আদিপিতা আদম ও মাতা হাওয়া আলাইহিসসালামের পুনর্মিলন ঘটে এবং তাদের দোয়া কবুল হয়। এই প্রান্তরেই ঐতিহাসিক বিদায়ী ভাষণ দিয়েছিলেন শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)।
গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরাহ থেকে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে ভাষণ দেন মসজিদে হারামের ইমাম শায়েখ সালেহ বিন হুমাইদ। খুতবায় তিনি বিশ্ব-মানুষের জন্য, বিশেষত, মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন। তিনি বলেন, ইসলাম এক ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম, যা মুসলমানদের ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়। বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে শায়েখ সালেহ বলেন, বর্তমানে সারা পৃথিবীর মুসলমানগণ এক কঠিন সময় পার করছেন। তাদের অনেকেই আজ নির্যাতিত, নিপীড়িত। যতক্ষণ না সবাই এক হবেন ততক্ষণ এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আজ আপনাদের ওপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তিনি মুসলিম নেতাদের এক হয়ে কল্যাণকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
মসজিদে হারামের এই ইমাম খুতবায় বলেন, যারা সন্ত্রাসী কাজ-কর্মে লিপ্ত, যারা ফাসাদ সৃষ্টি করছে, তাদের নিজেদের পরিণতি সম্পের্কে ভাবতে হবে। একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা পুরো মানবজাতিকে হত্যা করার নামান্তর। ইসলামের বড়ত্ব, মহানতা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য ইসলাম ধর্ম নির্বাচন করেছেন, যা মানুষকে আলোময় করে তোলে। শায়েখ সালেহ বলেন, আমাদের রব যে নেয়ামতরাজি আমাদের দান করেছেন, তার হিসাব তিনি হাশর দিবসে নেবেন। সূত্র : আল জাজিরা আরবি।
হাজিরা সারা দিন আরাফায় অবস্থান করে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন। তাসবিহ পড়েছেন মহান রবের নামে। আরাফায় তারা এক আজান ও দুই এক্বামতে জোহর ও আসরের নামাজ এক সঙ্গে আদায় করেন। সূর্যাস্তের পর চলে আসেন মুজদালিফায়। সেখানে একসঙ্গে আদায় করেন মাগরিব ও এশার নামাজ। পরে আল্লাহর এই মেহমানরা রাতযাপন করেন খোলা আকাশের নিচে।
আজ সোমবার হাজিরা মুজদালিফা থেকে মিনায় ফিরে আসবেন এবং শয়তানকে লক্ষ্য করে জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন; আল্লাহর নামে পশু কোরবানি দেবেন এবং মাথা মুণ্ডাবেন। এরপর পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ায় সায়ির (দৌড়ানো) মাধ্যমে শেষ করবেন পবিত্র হজ।
হজরত আদম (আ.) কর্তৃক নির্মিত পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবাকে কেন্দ্র করেই মূলত হজের কার্যাদি আবর্তিত হয়। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তার পুত্র ইসমাইল (আ.) কাবাঘর পুনর্র্নিমাণ করেন। হজের বেশির ভাগ কাজই হজরত ইব্রাহিম (আ.), তার স্ত্রী হাজেরা এবং পুত্র ইসমাইলের (আ.) সম্পাদিত কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে হজরত ইব্রাহিম কর্তৃক শিশুপুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে যাওয়ার মহান ত্যাগের ঘটনার অনুকরণে।
হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম এবং সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। এ বছর ২০ লাখের বেশি মুসলমান পবিত্র হজ পালন করছেন। বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন।
কাবার গিলাফ পরিবর্তন :
এদিকে প্রতিবছরের মতো গতকালও পবিত্র কাবা শরিফে লাগানো হয় নতুন গিলাফ। গিলাফটি খাঁটি রেশমের তৈরি। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫০ কিলো রুপা ও সোনার সুতা। সব মিলিয়ে এতে ব্যয় হয়েছে ২০ মিলিয়ন রিয়াল। সৌদি সরকারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এবারের গিলাফের ওজন প্রায় ৮০০ কিলো। ৪৭টি খন্ড মিলিয়ে পুরো গিলাফের আয়তন ৬৫৮ বর্গ মিটার। প্রতি খন্ডের দৈর্ঘ ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৯৫ সেন্টি মিটার। পূর্ণ গিলাফ তৈরিতে প্রায় ১ বছর কাজ করেছেন ৮৬ শ্রমিক। খবর ডন উর্দু।