এইচ এম জোবায়ের হোসাইন, ত্রিশাল : জামাল উদ্দিন দিন মজুরের কাজ করে। উপার্জনের অর্থ দিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করে যাচ্ছিল। স্ত্রী সন্তানসহ পাঁচ জনের সংসারের গ্লানী টেনে থাকার ঘরের কোন ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। ভাঙ্গাচুড়া ঘুপড়ি ঘরে কোন প্রকার দিন পার করছিল ওই পরিপার। অর্থের অভাব থাকলেও সন্তানদের লেখা পড়ায় কোন ঘাটতি দেননি জামাল উদ্দিন। একটি বসত ঘর করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলেও তা করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোন রকম চললেও একটি ঘরের অভাব ছিল তার। ভাঙাচুড়া, জরাজীর্ণ পলিথিনে মোড়ানো ঘরে দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ঐ দম্পত্তি। একটু ঝড়বৃষ্টি হলেই চাল চুয়ে পানি পড়তো ঘরে।
বিষয়টি নজরে আসে ত্রিশাল উপজেলার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রকিব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের। ফাউন্ডেশনটির প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মিনহাজ বিষয়টি সরেজমিনে খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব প্রদান করেন একটি টীমকে। ওই টিমের সদস্য মানিক আচার্য্য, মাহবুব আলম উজ্জলসহ অন্যান্য সদস্যরা সরেজিমন করে বসত ঘর নির্মাণের প্রস্তাব পেশ করেন।
গত ১০ নভেম্বর ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় গত ২৪ নভেম্বর। শুক্রবার সকালে ওই ঘরের চাবি জামাল উদ্দিন দম্পত্তির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। চাবি হস্তান্তর, মিলাদ ও দোয়া পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, মরহুম রকিবের পিতা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রউফ, মাওলানা আবু তাহের, সমাজসেবক জয়নাল আবেদীন, আনিছুর রহমান, রকিব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মিনহাজ, ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক এইচ এম জোবায়ের হোসাইন, ফাউন্ডেশনের সদস্য সোহান, বিরাজ, মোঃ রুকন, তারেক, গৌতম, তপন সাহা, মাহবুব আলম উজ্জল, মানিক আচার্য্য, মিল্টন শিকদার, মনোরঞ্জন মনো, লিটন পন্ডিত প্রমূখ।
স্থানীয়রা জানান, দুই মেয়ে এক ছেলে ও এক স্ত্রী নিয়ে জামাল উদ্দিনের সংসার। একমাত্র ছেলে জাহিদ হাসান এসএসসিতে অধ্যায়নরত। বড় মেয়ে সাথী নবম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে ইতি ৫ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত।
জামাল উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন যাবত একটি ঘর করার জন্য অনেক চেষ্টা করছিলাম, সন্তানদের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ মিটিয়ে কোনভাবেই সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমার সে স্বপ্ন পূরণ করে দিল রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন। তিনি ফাউন্ডেশনের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানান এবং মরহুম রকিবের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মিনহাজ জানান, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসহায় দরিদ্র পরিবারের জন্য আমরা সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে গৃহ নির্মান করে দিয়ে থাকি। এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে এর আগে আরও ৯টি বসত ঘর করে দেওয়া হয়েছে। দশ নম্বর ঘরটি আজ হস্তান্তর করা হল। এছাড়াও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রিশাল উপজেলায় চিকিৎসা সহায়তা, শিক্ষা সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :