বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
ফুলবাড়িয়া নিউজ 24ডটকম : মাথায় দুষ্টু চিন্তা থাকলে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। ৩৪তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘২২ হাজার টাকার চেয়ে বেশি বেতন কখনোই তোমাদের হবে না। ব্র্যান্ডের দামি শার্ট-প্যান্ট পরতে পারবে না। তিন বেলা খেতে পারবে। অভিজাত জীবন-যাপন করতে পারবে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরা যাবে। কারো মাথায় দুষ্টু চিন্তা থাকলে চাকরি ছেড়ে দাও। আমার সঙ্গে ঢাকায় চলে যাও। আমি তোমাদের অনুরোধ করবো তোমরা নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করো’।
বুধবার (০১ জুন) ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ৩৪তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট যোগদান করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকিসহ শেরপুর, নেত্রকোণা ও জামালপুরের জেলা প্রশাসক।
রাজনৈতিক নেতাদের দিক-নির্দেশনায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে মন্তব্য করে মুখ্যসচিব বলেন, ‘পাবলিক ইউনিভার্সিটিতেই ব্রিলিয়ান ছাত্ররা পড়ে। আর মেধাবীরা সব সময়ই সরকারি চাকরিতে এসেছে। এটি ফরেন সার্ভিস, পুলিশ বা কাস্টস বা প্রশাসন যাই হোক। দেশ উন্নয়ন হয়েছে। এতে পলিটিক্যাল লিডারদের দিক নির্দেশনা আছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেছে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের পুরো জীবন সামনে। তোমরা ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করবে। উন্নত বাংলাদেশের জন্য তোমাদের তৈরি করতে হবে। বর্তমান সময়ে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তোমরা চোখ-কান খোলা রাখো। কবি নজরুলের ভাষায় বলি- দেখবো আমি জগতটাকে। সমস্ত জ্ঞান এখন হাতের মুঠোয়।
প্রশাসনিক কাজে প্রতিটি কর্মকর্তার সমান মনোযোগ দিতে হবে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে আইন-শৃঙ্খলা অথবা উন্নয়ন সব কাজেই নজরে রাখতে হয়। সমানে যা দেখবে সেটাই তোমাদের সাবজেক্ট। সমান মনোযোগ ও গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিটি বিষয়ে।
এসব কথা বলতে বলতে নিজের জীবনের উদাহরণ টানেন মুখ্য সচিব। গল্প বলেন একজন রিকশা চালকের সঙ্গে সরকারি চাকরি জীবনে প্রবেশের পর নিজের অভিজ্ঞতার। বলেন, যে মাসে আমি চাকরিতে যোগদান করেছি তখন আমার বেতন ছিল ১০ হাজার টাকা। একদিন চাকরিতে জয়েন করার পর কী কাজে শান্তিনগরের বাজারে গিয়েছি। ওখান থেকে রিকশায় শাহবাগে আসবো। রিকশাওয়ালা বললো- ৪ টাকা। আমি বললাম এইটুকু পথ মাত্র দুই টাকা ভাড়া। রিকশাওয়ালা বললো- আপনি স্যুট পরা সাহেব মানুষ। আমি রিকশায় চলতে চলতে ওর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম।
বললাম, তোমার চেয়ে আমার বেতন বেশি না। বেশি হলে তোমাকে চার টাকা বেশি ভাড়া দেবো। পরে রিকশাওয়ালা স্বীকার করলো আমার খরচ বেশি। আমি বললাম, আমি তোমার মতো শারীরিক পরিশ্রম করি না। আমার দৈনিক বেতন ২৫ টাকা। আমি রিকশাওয়ালাকে কষ্টের কথা বললাম।
মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ৭৫০ টাকা বেসিক ছিল। দুই বছর পরে আমি দেখেছি, এ চাকরিতে সহজে মানুষের সেবা করা যায়। মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যায়। চোখের পানি মুছে ফেলা যায়।
৩৫ জন নবীন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অনেকেই বেসরকারি চাকরি ছেড়ে এখানে যোগ দিয়েছেন। কেউ বেতন পেতেন ৫০ হাজার টাকার উপরে। কিন্তু ওই বেতন ছেড়ে তারা চলে এসেছেন প্রশাসনে মাত্র ২২ হাজার টাকা বেতনে। কিন্তু কেন, জানতে চাইলেন মুখ্য সচিব।
উত্তরে একজন নবীন ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, আমার স্বপ্ন ছিল বিসিএস প্রশাসনে চাকরি করা। এ কারণে বেতনের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল না। চাকরি ছেড়ে আসার সময়ে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি। আমার সহকর্মীরা বলছিল- তোমার বেতন তিন ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার খারাপ লাগেনি।
পরে মুখ্য সচিব বলেন, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করতে গেলে প্রশাসনের চেয়ে ভালো কাজ করা যায় না। আমি তোমাদের অনুরোধ করবো নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা কর। কারো মাথায় দুষ্টু চিন্তা থাকলে চাকরি ছেড়ে দাও। আমার সঙ্গে ঢাকায় চলো।
-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম