বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মধুপুরে ব্যবসায়ী মহল তথা সমগ্র উপজেলায় এক পরিচিতি নাম নঈম উদ্দিন ওরফে নয়নমনি। অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েও মেয়েদের কারনে মরণের পরও আস্তাকুঁড়ে রয়েছেন তিনি। জীবদ্দশায় সম্পত্তি ভাগিয়ে নিতে একটি মহলের ইন্ধনে মেয়েরা বাবার বিরুদ্ধে সালিশ-দরবার এবং মামলা-মোকাদ্দমা করে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। এমনকি মারা যাওয়ার পর লাশ আটকিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে। বাবার পর এবার স্বামীদের টার্গেট করেছে বেপরোয়া মেয়েরা। যৌতুক ও দেন মোহরের টাকা ফেরৎ পাওয়ার পরও অর্ধেক সম্পত্তি দাবি করে স্বামীর পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন নয়নমনির মেয়েরা। এ ঘটনায় মধুপুর টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ মে বেশ কিছু লোক এসে নয়নমনির দ্বিতীয় মেয়ে নুর নাহারের স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের জাঙ্গীর মেশিনারীজ এবং নিউ নয়মনমনি স্যানেটারী দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। কে বা কারা তালা লাগাল এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
স্থানীরা জানান, পৌরসভা, বণিক সমিতি ও পুলিশ এসে তালা লাগিয়েছেন। বণিক সমিতির সভাপতি মো.সিদ্দিক হোসেন খান জানান, দোকানের মালামাল সিস করে পুলিশ তালা লাগিয়েছেন। অপর দিকে পুলিশ বলেন আমরা তালা লাগাইনি বণিক সমিতি তালা লাগিয়েছে। বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর জহির উদ্দিন বাবর জানান জাহাঙ্গীরের দোকান তালা দেয়ার ব্যাপারে বণিক সমিতি সম্পৃক্ত নয়।
পৌর মেয়র মাসুদ পারভেজ জানান, তালা বণিক সমিতিও লাগায়নি আবার পুলিশও লাগায়নি তালা লাগিয়েছে নুর নাহার বেগম। তিনি জানান নুর নাহার পৌরসভায় স্বামী জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু নুর নাহার আমার ভাগ্নি এবং জাহাঙ্গীর আমার পরিচিত হওয়ায় আমি তাদেরকে নোটিশ করিনি। কিন্তু কাগজপত্র থেকে দেখা যায় ৩০ মে তালা দেয়া হয়েছে, ৩০ মে পৌরসভায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে এমনকি ৯ জুন সালিশের দিন ধার্য্য করে ৩০ মে বাদী-বিবাদীকে নোটিশও করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর জানান, নয়নমনির ৫ মেয়ে নুর জাহান, নুর নাহার, নুরমালা, লিজা এবং জ্যোতি। বাবা নয়নমনি মেয়েদের লেখা-পড়া শিখিয়ে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে নুর জাহানমনি, নুর নাহারমনি, নুরমালামনিকে বিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক মেয়ের স্বামীকে ১০ লাখ করে টাকা দিয়েছিল। আমার ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমি নুর নাহারকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে বাসা করে দিয়েছি এবং হজ করিয়ে এনেছি। তিনি জানান, যৌতুক এবং দেন মোহরের টাকা পরিশোধ করেও তাকে আমি আরো অনেক বেশি দিয়েছি। তারপর সে আমার ব্যবসার অর্ধেক দাবি করিতেছে। একটি মহলের ইশারায় বড় মেয়ে নুর জাহানের নির্দেশে মেয়েরা তার বাবার চেক চুরি মামলা-মোকাদ্দমা করে তাকে নাযেহাল করেছে এবং মৃত্যুর সময় লাশ জিম্মি করে টাকা আদায় করে নিয়েছে।
বাবার লাশ জিম্মি করে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে মেঝ মেয়ে নুমালা বলেন, বাবা আমাদের সাথে যেমন অন্যায় করেছেন ঠিক তেমনি অন্যায় করেছেন জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, বাবার লাশ না আটকালে ছোটবোন লিজা ও জ্যোতির জন্য ২০ লাখ টাকা পেতাম না।
মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম জানান, বণিক সমিতি তালা লাগিয়েছে তাছাড়া বিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমি পুলিশ দিয়ে সহায়তা করেছি। তিনি জানান ৩১ মে জাহাঙ্গীর নূর নাহারকে ডিভোর্স দিয়েছে। ১৫ বছর সংসার করার পর একটি মেয়ে ডিভোর্স করবে এটা অন্যায়। পূর্ববর্তী অফিসার ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে মেয়েরা হেন কাজ নাই করে নাই। তিনি জানিয়েছেন আমার থানায় বসে জনপ্রতি ২৫ লাখ টাকা ভাগ করে দিয়েছি।
অভিযোগের ব্যাপারে নুর নাহার মুঠোফোনে বলেন, আপনার সাথে ফোনে কথা বলব না বাড়ীতে আসেন সামনাসামনি কথা বলব। তার কথামত বাড়িতে গেলে পৌরসভার হুমায়ূন কমিশনারকে ফোন দেন। ফোনে পেয়ে তিনি পৌরসভার কাজ ফেলে দেড় মিনিটের মধ্যে বাসায় হাজির হন। তিনি জানান জাহাঙ্গীর পার্টনারশীপ দলিলে নরু নাহারের সাথে ব্যবসা করতো। তার দোকান তালা দিয়েছি এবং তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে হাড় রক্তাত্ব করবো তারপর সম্পত্তির ভাগ বুঝে নেব।
নুর নাহার বলেন, জাহাঙ্গীরের সব সম্পত্তি আমার বাবার। তিনি বলেন ৩০ মে দোকানে তালা দেয়ায় ৩১ তারিখ সে আমাকে ডিভোর্স করেছে।