সোমবার, ০৫ Jun ২০২৩, ১০:০০ অপরাহ্ন

ভালুকায় টাকার লোভে বাল্য বিয়ে: বর ৬০ কনে ১৫বছর

images

জাহিদুল ইসলাম খান, ভালুকা : ভালুকায় ১৫ বছর বয়সি এক কিশোরীকে কৌশলে বিয়ের জন্য কিশোরীর চাচাকে ম্যানেজ করে জন্মনিবন্ধন সনদে বয়স বৃদ্ধি করে জোরপূর্বক কাবিননামায় স্বাক্ষর নিয়েছেন কামাল উদ্দিন নামে ষাট বছর বয়সি এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের মহনা গ্রামে। ওই ঘটনার বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই কিশোরী।

স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার মহনা গ্রামের পিতৃহারা কিশোরীর রীমা আক্তার এখনো নাবালিকা। একই গ্রামের অন্য একটি পাড়ার আলা উদ্দিনের ছেলে তিন সন্তানের জনক ষাট বছর বয়সি কামাল উদ্দিন। কিছুটা দূরত্বে হলেও নিজের জমিজমা দেখবাল করার নামে রীমাদের পাড়ায় ও তাদের বাড়িতে অবাদ যাতায়াত ছিল জামাল উদ্দিনের। দীর্ঘদিনের আসা যাওয়ায় রীমার মা শিরিন আক্তারের সাথে কিছু টাকা পয়সার লেনদেনও হয়। এমনি এক পর্যায়ে রীমার উপর নজর পড়ে জামাল উদ্দিনের। অর্থকড়ির লোভ দেখিয়ে সহজেই বশে আনেন রীমার চাচা রহিম মিয়া ও মা শিরিন আক্তারকে। ইতোমধ্যে কৌশলে এবং নানান ভয়ভিতি দেখিয়ে ভূয়া জন্মসনদে কামাল উদ্দিনের সাথে বিয়ের কাবিননামায় স্বাক্ষর নেয়া হয় রীমার। কাবিনামা রেজিস্ট্রি করেন ভালুকা সদরের কাজি খন্দকার মুকিত হুসাইন। এদিকে, ওই কাবিননামার উপর ভিত্তি করে কৌশলে এবং পরবর্তীতে গায়েরজোরে রীমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার উদ্যোগ নেন জামাল উদ্দিন। কিন্তু ওই বিয়েতে মত নেই পিতৃহীন রীমা আক্তারের। তাই সে ওই ঘটনার বিচার দাবি করে, বিয়ের জন্য কামাল উদ্দিন, চাচা রহিম মিয়া, মা শিরিন আক্তারসহ জড়িত অন্যান্যদের নামে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একটি আবেদন করা হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাদশাহ মিয়া স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে সামাজিক সালিসের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু স্থানীয় মুরব্বীদের ডাকে সাড়া দেননি অভিযুক্তগণ। পরে রীমার বড় চাচা নাজিম উদ্দিন ও অন্যান্যদের সহায়তায় গত বুধবার সন্ধ্যায় ওই বিষয়ে বিচার দাবি করে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেছে নিরাপত্তাহীন অসহায় ওই কিশোরী। এদিকে, ওই কিশোরীকে বশে আনার জন্য তাকে ঘিরে নানান কথা ছড়াচ্ছেন, জামাল উদ্দিন ও তার লোকজন।

কিশোরী রীমা জানান, টাকার লোভে মা-চাচাসহ আরো কয়েকজন মিলে তার অমতে গায়েরজোরে কামাল উদ্দিনের কাছে তাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। বয়স বাড়ানোর জন্য এক চাচীকে দেখিয়ে তার নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরী করা হয়েছে এবং তাকে ভয়ভিতি দেখিয়ে ওই জন্মসনদে কামাল উদ্দিনের সাথে তার বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এখন তার নামে বিভিন্ন মিথ্যা রটনা করা হচ্ছে। বর্তমানে সে আতংকের মাঝে রয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি।

পনাশাইল এসএম আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান জানান, মাদরাসার ভর্তি রেজিষ্টার অনুসারে রীমা আক্তারের জন্ম তারিখ ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারী। সে অনুসারে তার বর্তমান বয়স ১৬ বছরের কাছাকাছি।

কামাল উদ্দিন জানান, রীমাদের বাড়ির কাছে জমি আছে তার। জমিজমা দেখতে যাওয়ার কারণে তাদের বাড়িতেও যাতায়ত ছিল তার এবং রীমার মায়ের সাথে টাকা পয়সারও লেনাদেনা ছিল। একবার রীমার মা অসুস্থ্য হয়ে গেলে বেশ টাকা খরচ করে তিনি তার চিকিৎসা করিয়েছেন।তিনি জানান বিয়েতে মেয়ের মায়েরও সম্মতি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবী করেন তার বর্তমান বয়স ৪৮।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘কামাল উদ্দিন নিজে আমার কাছে স্বীকার করেছে তার বয়স ষাট বছর। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সালিসে নিষ্পত্তি করার জন্য স্থানীয় মুরব্বীদের দায়িত্ব দেয়া হয়ে ছিল। কিন্তু তাদের ডাকে সারা দেয়নি প্রতিপক্ষরা। পরে ন্যায় বিচারের জন্য বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে ওই কিশোরীকে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার জানান, ওই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

কপিরাইট © ফুলবাড়িয়ানিউজ২৪ ডট কম ২০২০
Design & Developed BY A K Mahfuzur Rahman