ফুলবাড়িয়ায় ভিজিএফ বিতরণে ১০কেজির কার্ডধারীরা পাচ্ছে ৭/৮কেজি


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬, ১১:২৬ AM / ১০৪
ফুলবাড়িয়ায় ভিজিএফ বিতরণে ১০কেজির কার্ডধারীরা পাচ্ছে ৭/৮কেজি

vgfমো. আব্দুস ছাত্তার, ফুলবাড়িয়া নিউজ 24ডটকম : ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ১৩ইউনিয়নে ৭৮হাজার ৭শ ৭৩জন কার্ডধারীকে ১০কেজি হারে ভিজিএফ এর চাউল বিতরণ করার টার্গেটে সরকার প্রায় ৭শ ৮৮মে. টন চাউল বরাদ্দ দেয়। চেয়ারম্যানরা এসব চাউল ঈদের আগেই দু:স্থ ও অতি দরিদ্র ব্যক্তি ও পরিবারের মাঝে বিতরণ করার কথা। কিন্তু অনেক ইউনিয়নেই কার্ডধারীরা ১০কেজির স্থলে ৭/৮কেজি বা তার কমও পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার উপজেলার ১২নং আছিম পাটুলী ইউনিয়ন, ১০নং কালাদহ ইউনিয়ন ও ৯নং এনায়েতপুর ইউনিয়ন সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত চাউল পরিমাপ করা হয়। এসব অভিযোগকারীদের হুমকি দেয়ায় সাধারণ মানুষরা তেমন সহযোগিতাও করতে চায় না।
আছিম পাটুলী ইউনিয়ন পরিষদে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে কার্ডধারী মহিলাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। কার্ডধারীরা বলেছেন মাগনা চাইল (চাউল) যা দেয়, তাই লাভ; কেরাবেরা (প্রতিবাদ) করলে আর কার্ড পাওয়া যাবে না। একেক জনের জন্য একেক রকম ওজন, এভাবে সরকার দেয় না, সরকার সবার জন্য এক রকমই দেয়। ক্রেতারা জানিয়েছেন গুদামের চাউল গুদামেই যায়।
২নং ওয়ার্ডের ইন্তাজ আলীর পুত্র জামাল উদ্দিন (৫০) বলেন, জীবনে প্রথম কার্ড মিলেছে। কেন বিক্রি করলেন বলতেই, সবাই বেছতাছে (বিক্রি) তাই। ভেতরে প্রবেশ করার আগেই চেয়ারম্যান রুমে আপ্যায়নের ধুম লক্ষ্য করা গেছে। চাউল দেয়ার রুমে ২টি দরজা একটি প্রবেশ পথ অন্যটি বাহির পথ। দু’টি দরজার সামনে উড়– পর্যন্ত উঁচু করে বাঁশ দিয়ে বেরিগেট (বাঁধ) দেয়া হয়েছে। এতে যুবকরা আসা যাওয়া করতে পারলেও বৃদ্ধ বয়সীরা বিশেষ করে নারীরা পড়েছিলেন বিপাকে। তারা কষ্ট করে ভেতরে ঢুকতে পারলেও তাদের বের হওয়াটা দারুন কষ্টসাধ্য ছিল। লাল বালতিতে দু’ভাবে চাউল বিতরণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ যারা চাউল নেন একটা দুইটা কার্ড থাকতে পারে। কিন্তু ৬/৭টা কার্ড নিয়ে আসলে বুঝা যায় এরা ব্যবসায়ী। কোন কার্ডে ৬কেজি আবার কোন কার্ডে ৮কেজি অথবা সাড়ে ৮কেজি হারে দেয়া হচ্ছে চাউল। একজন দায়িত্বশীল জানিয়েছেন সকালে মহিলাদের চাউল নেয়ার চান্স না দেয়া এবং এখানে বেড়িঘেটের (বাঁধ) কারণে এখন মহিলারা নেই। টেক অফিসার উপস্থিত থেকে অর্জিনাল কার্ডধারীর চাউল পাওয়াতে সোচ্চার ছিলেন।
১০নং কালাদহ ইউনিয়নের কার্ডও কালো বাজারে বিক্রির হিড়িক লক্ষ্য করা গেছে। অনেক দু:স্থরা কার্ড না পেয়ে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন বলে এ প্রতিবেদক কে জানিয়েছেন। নাস্তা খেয়ে (বেলা ৩টা) অপেক্ষা করছেন ৭৫বছর বয়সী জয়নব, তাঁর বাড়ী ৩নং ওয়ার্ডে। কার্ড পাননি, তবে মেম্বার অপেক্ষা করতে বলেছেন, সাংবাদিকের সাথে কথা, টের পেয়ে তাড়াহুড়া করে সবার আগে চাউল, মহাখুশি জয়নব, আল্লাহ আপনাকে বড়লোক বানাক। এ সময় আরও চাউল পেলেন ভিক্ষুক হাজেরা, ফাতেমা ও করিমন নেছা।
ইউনিয়ন পরিষদের কোণায় দাড়িয়ে কথা বলছেন কয়েকজন, তাদের সাফ কথা যারা ১শ মণ ধান পায় তারা কার্ড পাইলে বিক্রি করবেই।
৯নং এনায়েতপুর ইউনিয়নে কার্ডধারী রফিকুল ও হাজেরা এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে চাউল পরিমাপ করে পাওয়া গেছে বস্তাসহ ৬কেজি ৯শ গ্রাম। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ৭কেজির স্থলে বেড়ে ৯কেজিতে দাড়ায়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যানকে পাওয়া না গেলেও সচিব অনিল চন্দ্র দেবনাথ ও দুদু মেম্বারের নের্তৃত্বে বিতরণ কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে।
এ সব অনিয়মে উদ্ধৃত্ত চাউল কিভাবে জায়েজ করা হবে এখন সেটিই প্রশ্ন।