রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন

ফুলবাড়িয়ার ভিজিএফ: মাগনা চাইল যা দেয় তাই লাভ

asim-07.07ফুলবাড়িয়া নিউজ 24ডটকম : প্রতি বছর বর্তমান সরকার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের চেয়ে দু:স্থ ও অতি দরিদ্র ব্যক্তি ও পরিবারের মাঝে বিনামুল্যে বিতরণের জন্য অনেক বেশি চাউল বরাদ্দ দিয়ে আসছে। যা সুষ্ঠুভাবে বন্টন হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে কোন দু:স্থ ব্যক্তি ও পরিবার বাদ পড়ার কথা না। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। বুধবার (৭সেপ্টেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করে দু:স্থ ও গরিবদের সাথে কথা বলে উঠে এসেছে নানাবিধ তথ্য।
তারা জানিয়েছেন মাগনা চাইল (চাউল) যা দেয়, তাই লাভ; কেরাবেরা (প্রতিবাদ) করলে আর কার্ড পাওয়া যাবে না। একেক জনের জন্য একেক রকম, এভাবে সরকার দেয় না, সরকার সবার জন্য এক রকমই দেয়। ক্রেতারা জানিয়েছেন গুদামের চাউল গুদামেই যায়।
আছিম পাটুলী ইউনিয়ন পরিষদের প্রবেশ পথেই কথা হয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে। ক্রেতারা সকাল বেলা ১৮০টাকা দরে কার্ড কিনলেও বেলা বাড়ার সাথে (শেয়ার বাজারের শেয়ারের মতোই বাজার উঠানামা করছে) সাথে কার্ডের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। অনুসন্ধানে মিলেছে এর তথ্য। ক্রেতারা, কার্ড কিনে ছোট-বড় পুরুষ-মহিলাদের মাধ্যমে চাউল উত্তোলন করছে। আছিম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইন্তাজ আলীর পুত্র জামাল উদ্দিন (৫০) বলেন, জীবনে প্রথম কার্ড মিলেছে। কেন বিক্রি করলেন বলতেই, সবাই বেছতাছে (বিক্রি) তাই। ভেতরে প্রবেশ করার আগেই চেয়ারম্যান রুমে আপ্যায়নের ধুম লক্ষ্য করা গেছে। চাউল দেয়ার রুমে ২টি দরজা একটি প্রবেশ পথ অন্যটি বাহির পথ। দু’টি দরজার সামনে উড়– পর্যন্ত উঁচু করে বাঁশ দিয়ে বেরিগেট (বাঁধ) দেয়া হয়েছে। এতে যুবকরা আসা যাওয়া করতে পারলেও বৃদ্ধ বয়সীরা বিশেষ করে নারীরা পড়েছিলেন বিপাকে। তারা কষ্ট করে ভেতরে ঢুকতে পারলেও তাদের বের হওয়াটা দারুন কষ্টসাধ্য ছিল। লাল বালতিতে দু’ভাবে চাউল বিতরণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ যারা চাউল নেন একটা দুইটা কার্ড থাকতে পারে। কিন্তু ৬/৭টা কার্ড নিয়ে আসলে বুঝা যায় এরা ব্যবসায়ী। কোন কার্ডে ৬কেজি আবার কোন কার্ডে ৮কেজি অথবা সাড়ে ৮কেজি হারে দেয়া হচ্ছে চাউল। একজন দায়িত্বশীল জানিয়েছেন সকালে মহিলাদের চাউল নেয়ার চান্স না দেয়া এবং এখানে বেড়িঘেটের (বাঁধ) কারণে এখন মহিলারা নেই। টেক অফিসার উপস্থিত থেকে অর্জিনাল কার্ডধারীর চাউল পাওয়াতে সোচ্চার ছিলেন। এ সব অনিয়মের বেশি লাভবান হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে ১০নং কালাদহ ইউনিয়নের কার্ডও কালো বাজারে বিক্রির হিড়িক লক্ষ্য করা গেছে। অনেক দু:স্থরা কার্ড না পেয়ে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন বলে এ প্রতিবেদক কে জানিয়েছেন। নাস্তা খেয়ে (বেলা ৩টা) অপেক্ষা করছেন ৭৫বছর বয়সী জয়নব, তাঁর বাড়ী ৩নং ওয়ার্ডে। কার্ড পাননি, তবে মেম্বার অপেক্ষা করতে বলেছেন, সাংবাদিকের সাথে কথা, টের পেয়ে তাড়াহুড়া করে সবার আগে চাউল, মহাখুশি জয়নব, আল্লাহ আপনাকে বড়লোক বানাক। এ সময় আরও চাউল পেলেন ভিক্ষুক হাজেরা, ফাতেমা ও করিমন নেছা।
ইউনিয়ন পরিষদের কোণায় দাড়িয়ে কথা বলছেন কয়েকজন, তাদের সাফ কথা যারা ১শ মণ ধান পায় তারা কার্ড পাইলে বিক্রি করবেই।
নামধারী গরিবরা কার্ড না পেলে প্রকৃত দু:স্থ ও অতি দরিদ্ররা কার্ড পেলে তা কালো বাজারে বিক্রি হবে না বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। আগামী বিতরণে প্রশাসনের কঠোর তদারকি ও হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

কপিরাইট © ফুলবাড়িয়ানিউজ২৪ ডট কম ২০২০
Design & Developed BY A K Mahfuzur Rahman