সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১২:৫০ অপরাহ্ন

প্রাণভিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান দেয়নি

29-1422535436-bangladeshprezফুলবাড়িয়া নিউজ ২৪ডটকম : ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করলে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। সেই আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কারা জেলা প্রশাসন, কর্তৃপক্ষ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। সব শেষ পর্যায় হচ্ছে রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেখানে প্রধানমন্ত্রীরও সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

সূত্র জানায়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে গত বুধবার। বৃহস্পতিবার রিভিউ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আদালত। এরপর সেটা পাঠানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। কারাগারে সেটা পাঠানোর পর তাদেরকে পড়ে শোনানো হয়েছে। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা এই ব্যাপারে দুই জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শনিবার সকালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। তাদের কাছে তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করার কথা জানান। সেই হিসাবে তারা আবেদন করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেন। ম্যাজিস্ট্রেট সেটা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন।

এরপর কারা কর্তৃপক্ষ সেটা সম্পন্ন করে সেটা পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী বারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, মানবতাবিরোধি অপরাধে দন্ডিতদের প্রাণভিক্ষা পাওয়ার কোন নজির নেই। মানবতা বিরোধি অপরাধে দন্ডিতদের প্রাণভিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানে দেয়নি। সংবিধানে এই ধরনের ক্ষমতা না থাকায় রাষ্ট্রপতি তাদেরকে ক্ষমা করতে পারবেন না। তারপরও দেখতে হবে রাষ্ট্রপতি কি সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, প্রাণভিক্ষার চাওয়ার কোন সুযোগও আইনে নেই। কারণ আমরা যখন আইনটি সংশোধন করেছিলাম তখন আপিল ও রিভিউর বিধান ছিল না। আপিল করার নিয়ম আমরা আইন সংশোধন করে করি। আর রিভিউর নিয়ম আমরা করিনি এটা আদালত করেছে। আর প্রাণভিক্ষার কোন আবেদন করার নিয়ম মানবতাবিরোধি অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টে নেই। কেউ চাইলে বিষয়টি আমলে নিয়েই সেটা বিবেচনা করা হবে সেই রকম আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল। এর আগে কেউ এই ধরনের অপরাধে দন্ডিত হয়ে ক্ষমা চাননি। নিয়ম হচ্ছে কেউ আবেদন করলে, নিয়ম অনুযায়ী প্রাণভিক্ষার আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে মতামত দিবে। এরপর সেটাতে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে মতামত দিবে। এরপর সেটা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রীও এই ব্যাপারে তার মতামত দিবেন। প্রধানমন্ত্রীর মতামত পাওয়ার পর সেটা পাঠানো হবে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। সেখানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সিদ্ধান্ত জানার জন্য মতামত দিয়ে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরবেন। রাষ্ট্রপতি সকল দিক বিবেচনা করে ও তাদের আবেদন বিবেচনা করে এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন।

রাষ্ট্রপতি তার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে এই ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি চাইলে তাদের ক্ষমা করে দিতে পাবেন। দন্ড কমিয়ে দিতে পারেন। আবার আদালত যে ফাঁসির দন্ড দিয়েছেন সেই দন্ড কার্যকর করার জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এই ধরনের কথা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের আইনজীবীরা দাবি করেছেন। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রপতি চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এই জন্য আবেদন করতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। তবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষা চাইলে তাদেরকেই স্বহস্তে লিখিত আবেদন করতে হবে। নাহলে হবে না।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে যে আবেদন করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে এই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে দেখবেন সেটা আসলে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকি তাদের অন্য কোন ধরনের চিঠি। যেটা তারা রাষ্ট্রপতির কাছে বলতে চেয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি দেখে যে যথাযথ নিয়ম মেনে ও অপরাধ স্বীকার করেই তারা প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন তাহলে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। তেমন হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি কি সিদ্ধান্ত নিবেন সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

কপিরাইট © ফুলবাড়িয়ানিউজ২৪ ডট কম ২০২০
Design & Developed BY A K Mahfuzur Rahman