ফুলবাড়িয়া নিউজ 24 ডটকম : সারা দেশের প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবার নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত ছিল।
কিন্তু সৃষ্টপদে নিয়োগ নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় সরকারি আদেশ সত্ত্বেও ২৮ হাজারের মধ্যে ১৪ হাজার প্যানেল শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালে ‘প্যানেল শিক্ষক’ পদটি সৃষ্টি করা হয়। সৃষ্টপদটিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একটা মামলা আদালতে চলমান থাকায় প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না।
চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় প্যানেলভুক্ত প্রার্থী রয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইনি জটিলতায় এই মুহূর্তে ১৪ হাজারেরও কম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সারা দেশে জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২২ হাজার ৯২৫টিতে পঞ্চম পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব বিদ্যালয়ে চারজন সহকারী শিক্ষক ও একজন প্রধান শিক্ষক থাকবেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে এখন কিছু জটিলতা রয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় এখন নতুন নিয়োগ দিতে হলে তা পিএসসির মাধ্যমে দিতে হবে। আর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যেসব সহকারী শিক্ষক পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন, উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় সেসব শিক্ষককেও পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না।
তাই আপাতত প্রধান শিক্ষকহীন বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিয়ে একটি করে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য করাও যাচ্ছে না বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়।
এদিকে দুই সপ্তাহে তিন রকম সিদ্ধান্ত ও আদেশ জারি করায় বিপাকে রয়েছেন প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা। তারা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না বলে জানান। প্যানেল শিক্ষক নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়োগের জন্য ঘুষ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি এ নিয়ে একজন আইনজীবী আইনি নোটিশ পাঠান।
এরপর বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে একটি আদেশ পাঠায়। এতে জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে যে পঞ্চম পদ (আগে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন ছিলেন, এখন পাঁচজন) সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটির হিসাব ধরেই প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেয়।
নির্দেশনার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেছিলেন, নতুন আদেশের ফলে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের প্রায় সবাই নিয়োগ পাবেন।
শনিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। এটি এই মুহূর্তে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগুতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্ত প্রায় ২৮ হাজার জনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০১০ সালের ১১ এপ্রিল রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৪২ হাজার ৬১১ জনকে নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল গঠন করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। যদিও ঘোষণা ছিল সবার নিয়োগ হবে।
কিন্তু ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলে প্যানেল থেকে নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর নিয়োগ বঞ্চিত ও প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা আদালতে যান। আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। আদালতের রায়ের পর এবার সৃষ্টপদ জটিলতায় পড়েছেন প্যানেল শিক্ষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :