রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
ইসলামি ডেস্ক : মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত নামাজ। নামাজকে বলা হয় মুমিনের মি’রাজ। এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে কথোপকথন হয়ে থাকে। নামাজ মানুষকে যাবতীয় পাপাচার ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখে। নামাজের অসংখ্য ফজিলত ও তাৎপর্যের কথা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে ওইসব ফজিলত অর্জনের জন্য প্রয়োজন মনযোগসহ যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে তাদেরকেই সফল বলা হয়েছে যারা একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায় করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা তাদের নামাজগুলোর বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখে। ওরাই হলো তারা যারা হবে জান্নাতের উত্তরাধীকারী এবং সেখানেই থাকবে চিরকাল’। [সুরা মুমিন : আয়াত ৯-১১]।
আমরা নামাজ পড়ি ঠিকই কিন্তু নামাজে কী পড়ছি, রুকু-সেজদা ঠিক মতো হচ্ছে কিনাÑ সেসব সম্পর্কে খুব কমই খেয়াল রাখি। নামাজ তো কেবল উঠাবসার নাম নয়, নামাজে আত্মার সংযোগ থাকতে হয়। সেজন্য প্রয়োজন একাগ্রতা। তাই নামাজকে কেন্দ্র করে কিছু প্রস্তুতি নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের প্রস্তুতি হতে পারে।
মানসিক প্রস্তুতি :
১. সারাদিনের কর্মপরিকল্পনা নামাজকে কেন্দ্র করে তৈরি করুন। অর্থাৎ দিনের কাজ-কর্মের ফাঁকে ফাঁকে নামাজকে না ঢুকিয়ে আগে থেকেই প্ল্যান করে নিন যেন নামাজের সময়সূচিকে ঘিরে কাজ-কর্ম করতে পারেন।
২. নামাজের সময় সূচি মেনে চলুন। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়ে ফেলুন। সামান্য কারণে নামাজ পড়তে দেরি করবেন না।
৩. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে পড়ার চেষ্টা করুন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু দাও’। [সুরা বাকারা : আয়াত ৪৩]। এর দ্বারা জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব বুঝা যায়।
৪. নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে সকল অবসাদ, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
৫. নামাজে কোন কোন সুরা পড়বেন তা নামাজে দাঁড়ানোর আগেই ঠিক করে নিন।
শারীরিক প্রস্তুতি :
১. নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া প্রভৃতি জৈবিক কাজ সেরে নিন।
২. পরিচ্ছন্ন অবস্থায় নামাজ আদায় করুন। সেজন্য সঠিকভাবে ওজু বা গোসল সম্পন্ন করুন।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় শান্ত, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নামাজ আদায় করুন। মনসংযোগে বিঘœ ঘটায় এমন কোনো কিছু সামনে রাখবেন না।
নামাজ অবস্থায় করণীয় :
১. নামাজে তাড়াহুড়া করবেন না। মনে রাখবেন আপনি বিশ্বজগতের প্রভু সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান। অতএব ধীর-স্থিরভাবে নামাজ সম্পন্ন করুন।
২. নামাজের প্রতিটি ধাপ যেমন রুকু, সিজদা সঠিকভাবে আদায় করুন।
৩. নামাজে আপনার মস্তক অবনত রাখুন এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন।
৪. চেষ্টা করুন নামাজে কী আয়াত পড়ছেন তা অনুধাবন করতে। কারণ আয়াতের অর্থ বুঝে পড়লে তা মনসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সেজন্য কিছু বহুল পঠিত সুরা এবং দোয়ার বাংলা অনুবাদ মুখস্থ করে নিন। নামাজে মনসংযোগের জন্য এটি অনেক গুরুত্ব রাখে।
৫. নামাজ পড়ার সময় মাথায় রাখুনÑ হয়তোবা এ নামাজই আপনার শেষ নামাজ। অতএব জীবনের শেষ নামাজ কি মনোযোগের সাথে পড়তে চাইবেন না?
৬. নামাজের মধ্যে মনোযোগ ছুটে যেতে চাইলে কল্পনা করুন যে আপনি পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার নীচে জাহান্নামের ভয়ানক আগুন, সামনে জান্নাত আর উপরে মহান আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। কল্পনা করুন জান কবজ্ করার জন্য আপনার পিছনে মৃত্যুদূত হজরত আজরাইল আ. দাঁড়িয়ে আছেন, এ অবস্থায় কি মনোযোগ ছুটে যাওয়া সম্ভব?
সবচেয়ে বড় কথা হলো, মনে করতে হবে আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গেই কথা বলছি, তবেই নামাজে আসবে মনযোগ ও একাগ্রতা।
সূত্র- আমাদের সময় ডটকম