সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
ইন্টারনেট : তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। সরকার আবার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রা¯Íায় নেমে এসেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্রোহের অবসান ঘটেছে, সারা দেশে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট কৃষ্ণ সাগরীয় এলাকায় অবকাশ যাপন করছিলেন। তিনি অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই দৃঢ়ভাবে তা প্রতিরোধের নির্দেশ দেন। তিনি রাজধানীতে ফিরে আসার উদ্যোগ নেন।
শুক্রবার রাতে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ দাবি করেছিল, তারা দেশের সব নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। তারা সারা দেশে সামরিক আইন কারফিউ জারি করেছে। ই¯Íাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের বাইরে সামরিক ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে।
বিদ্রোহীরা পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে গোলাবর্ষণও করে। তারা সেনাপ্রধান হুলসি আকারকে পণবন্দি করে বলে আনাদুলু এজেন্সি জানিয়েছে। রাজধানী আঙ্কারার আকাশে সামরিক বিমান উড়ার শব্দও শোনা গেছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, যেসব সৈন্য সামরিক অভ্যুত্থানচেষ্টার সাথে জড়িত ছিল তাদের বেশির ভাগকে আটক করা হয়েছে।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়িলদিরিম শনিবার ভেঅরে জানান, তুরস্ক সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ দৃশ্যত ক্যু করার চেষ্টা করেছিল। তবে জানিয়েছেন, গণতন্ত্রকে বাধাগ্র¯Í করার কোনো চেষ্টা বরদা¯Í করা হবে না। তিনি তাদের দমন করা হয়েছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, তিনি বি¯Íারিত বিবরণ দেননি।
এদিকে দেশটির সরকারি আইনজীবীদের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাতব্যাপী সংঘর্ষে ৯০ জন নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর আগে অভ্যুত্থানকারী সেনারা পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের সদর দপ্তরে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালালে নিহত হয়েছে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তা। তবে ওই হেলিকপ্টারটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে প্রেসিডেন্টের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানী আঙ্কারার আকাশে বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৫৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিদ্রোহীরা যেসব হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে সেনাবাহিনীকে সেগুলো ভূপাতিতের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
অভ্যুত্থানকে দেশদ্রোহিতা আখ্যা এরদোগান বলেছেন, এর পরিকল্পনাকারীদের চড়া মূল্য দিতে হবে।
এর আগে এরদোগানের আহ্বানে হাজার হাজার সমর্থক রা¯Íায় নেমে আসে। বিক্ষোভের মুখে সেনা বাহিনীর বিদ্রোহী অংশ ই¯Íাম্বুল বিমানবন্দর থেকে সড়ে যেতে বাধ্য হয়।
শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম টিআরটি দখল করে । সেখান থেকে এক ঘোষক বিদ্রোহীদের দেওয়া বিবৃতি পাঠ করেন। এতে বলা হয়, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার শাসনের অবসান ঘোষণা করছে। শিগগিরই নতুন সংবিধান করা হবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ভবনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর হাই কমান্ড থেকে এ বিবৃতি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এছাড়া বিদ্রোহী অংশ সেনা সদর দপ্তরে যেসব কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখেছে তাদের মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারও রয়েছেন। রাতেই বিদ্রোহীরা ই¯Íাম্বুলের সঙ্গে দেশের অন্য অংশের ব্রিজ বন্ধ করে দেয়।সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এখন থেকে একটি দপিস কাউন্সিলদ দেশ পরিচালনা করবে। দেশে কারফিউ এবং মার্শাল লদ জারি করা হয়েছে। তবে বিদ্রোহের পেছনে সেনাবাহিনীর কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা এখনো জানা যায়নি। রাতে ই¯Íাম্বুলের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সেনাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আঙ্কারায় অনেক নিচ দিয়ে জঙ্গিবিমান উড়ে গেছে। এছাড়া ই¯Íাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএন তুর্ক ভবন সেনাবাহিনী দখল করে নেয় এবং এর লাইভ সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়। অভ্যুত্থানকারী সেনারা পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের সদর দপ্তরে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালালে নিহত হয়েছে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তা। তবে প্রেসিডেন্টের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে গুলি ছুড়ে ওই হেলিকপ্টারটি ভূপাতিত করা হয়েছে।
এদিকে ই¯Íাম্বুলের রা¯Íায় নেমে আসা এরদোগান সমর্থকদেরন লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাটির এক চিত্রসাংবাদিক জানিয়েছেন। তুরস্কে পার্লামেন্ট ভবনেও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে ট্যাংক মোতায়েন করেছে বিদ্রোহীরা। সেই ট্যাংক থেকেই গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এমপিরা নিরাপদ স্থানে লুকাতে সক্ষম হয়েছেন।
এ ঘটনার পরপর প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদ্রিম জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর একটি অংশ বে আইনি অভিযান শুরু করেছে। কোনো অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই অভিযান শুরু করেছে। তবে এটা কোন অভ্যুত্থান নয়। অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে উপকূলীয় শহরে থাকা এরদোগান রাতেই ই¯Íাম্বুলে ফিরে আসেন। তিনি ই¯Íাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে অবস্থান নেন। সিএনএনের মাধ্যমে এরদোগান অভ্যুত্থান ঠেকাতে জনগণকে রা¯Íায় নেমে আসার আহ্বান জানান। বিমানবন্দরে সমর্থকবেষ্টিত এরদোগান এই অভ্যুত্থান ‘দেশদ্রোহীতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ এরদোগান সরকারকে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোনে বলেছেন, ‘ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তুর্কি সরকার, বেসামরিক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
অপরদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, এরদোগান সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে বিদ্রোহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।