বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
তারাকান্দা : ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানা পুলিশের বিচক্ষনতা ও দক্ষতায় কৃষক লাল মিয়া খানকে (৫০) অপহরণ -হত্যার পর লাশ গুমের রহস্য উদ্ঘাটন করে ৩জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ৩জন কে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন তারাকান্দা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের সোহেল। ভিকটিম লাল মিয়া তারাকান্দা উপজেলার নলদিঘী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের পুত্র।
ব্রিফিং জানানো হয়, ২৯ আগস্ট রাত ৮ ঘটিকায় চা পান খাওয়ার উদ্দেশ্যে কৃষক লাল মিয়া খান (৫০) বাড়ী থেকে নলদিঘী মোড়ে যায়। চা পান খাওয়া শেষে রাত ১০ টার দিকে নলদিঘী মধ্যপাড়া গ্রামের দিকে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে তারাকান্দা থানার সাধারণ ডায়েরী নং-১৪৩৬, তারিখ ৩০ আগস্ট লিপিবদ্ধ করে।
উক্ত সাধারণ ডায়েরীর তদন্তভার এসআই (নিঃ) মো: রায়হানুর রহমান দিলে তিনি তদন্ত কাজ শুরু করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিরবিচ্ছিন্নভাবে তদন্তকাজ চলমান রাখেন। ৩১ আগস্ট তারিখ দুপুর ১২.৩০ ঘটিকায় অজ্ঞাতনামা আসামী ফোন করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬ ঘটিকায় তারাকান্দা থানাধীন নলদিঘী মধ্যপাড়া সাকিনস্থ জনৈক মজিবুর রহমান এর বসত বাড়ীর অনুমান ২০০ গজ দক্ষিণ দিকে ফিসারীর পুকুরে ভিকটিমের লাশ পাওয়া যায়। সংবাদ পাইয়া সহকারী পুলিশ সুপার ফুলপুর সার্কেল ময়মনসিংহ এর নের্তৃত্বে অফিসার ইনচার্জ তারাকান্দা এর দিকনির্দেশনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা সহ অন্যান্য অফিসার ও ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের লাশ পুকুরের পানির নিচ থেকে উত্তোলন করে ভিকটিমের সুরতহাল প্রস্তুত সহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের ছেলে রাসেল মিয়া থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে তারাকান্দা থানার মামলা নং-২, তারিখ-১ সেপ্টেম্বর ধারা- 364/385/৩০২/২০১/৩৪ রুজু হয়।
অফিসার ইনচার্জ মামলাটির তদন্তভার এসআই (নিঃ) মো: রায়হানুর রহমান এর অর্পন করে। মামলাটি রুজুর পূর্বেই ১। সোহেল মিয়া (৩৫), পিতা-শাহ জাহান, ২। শাহীন মিয়া (৪৫), পিতা-আঃ জব্বার খান, ৩। আব্দুল বারেক (৪০), পিতা-আলী আকবর সর্ব সাং-নলদিঘী, থানা- তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহগণকে গত ইং ০১/০৯/২০২৩ তারিখ অত্র ঘটনার সহিত জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করে জিজ্ঞাসা করলে তাহার কোন সদুত্তর দিতে না পারায় অত্র ঘটনা বা অন্য কোন ধর্তব্য অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে ফৌঃ কাঃ বিঃ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে তারাকান্দা থানার জিডি নং-৩০, তারিখ-০১/০৯/২০২৩ ইং মূলে থানা হেফাজতে রাখে।
সুত্রোক্ত মামলাটির সহকারী পুলিশ সুপার ফুলপুর সার্কেল ময়মনসিংহ এর নের্তৃত্বে অফিসার ইনচার্জ তারাকান্দা, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের এক পর্যায়ে জানতে পারে যে, ১। সোহেল মিয়া (৩৫), পিতা-শাহ জাহান, ২। শাহীন মিয়া (৪৫), পিতা-আঃ জব্বার খান, ৩। আব্দুল বারেক (৪০), পিতা-আলী আকবর সর্ব সাং- নলদিঘী, থানা-তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহগণ ঘটনাটি সংগঠিত করেছে। আসামী সোহেল মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ঘটনার ৫ থেকে ৬ দিন পূর্বে আসামী সোহেল, শাহীন ও বারেকশন আসামী শাহীনের ঘরে বসে পরিকল্পনা করে ভিকটিম লাল মিয়াকে হত্যা করে লাশ গুম করবে এবং মোবাইলে টাকা চাইবে।
উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ খুজতে থাকে। গত ২৯/০৮/২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ২২.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম লাল মিয়া নিজ গ্রামস্থ জনৈক কাশেম এর দোকানে চা খেয়ে পশ্চিম দিকে যেতে থাকে। আসামী সোহেল মিয়া ও আব্দুল বারেক দুইজন মিলে ভিকটিম কে অনুসরন করে পিছনে পিছনে যায়। কিছু দূর যাওয়ার পর আসামী সোহেল মিয়া পুকুরে মাছ দেখার কথা বলে ভিকটিম লাল মিয়াকে ঘটনাস্থল বর্নিত সোহেলের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। তখন কৌশলে সোহেল মিয়া পুকুরে খাবার দিতে থাকে এবং শাহীন মিয়া এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। অনুমান ১০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে শাহীন মিয়া আসে এবং সোহেল মিয়া ও আব্দুল বারেক ভিকটিম কে ধরে রাখে শাহীন মিয়া প্রথমে কাচি দিয়া ভিকটিমের গলায় ফেস দেয় এবং পেটের দুই পাশে চাকু দিয়া ঘাই দেয়।
ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হইলে সোহেল মিয়ার ফিসারীর পুকুরে ফেলে দেয়। শাহীন মিয়া এবং আব্দুল বারেক চলে যায়। আসামী সোহেল মিয়া ভিকটিমের লাশ বস্তায় ভরে এবং অন্য একটি বস্তায় বালি মাটি ভরিয়া লাশের বস্তার সহিত বাধিয়া ভিকটিমের লাশ তাহার ফিসারীর পুকুরের পাশে জনৈক মজিবর রহমান এর পুকুরে ফিসারীর পুকুরে ফেলে দিয়ে লাশ গুম করে।
আসামীগণ ২৯ আগস্ট রাত ১০ ঘটিকার সময় হতে একই তারিখ রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় অত্র মামলার ভিকটিম লাল মিয়া খানকে অপহরণ করে ধারালো অস্ত্রদ্বারা আঘাতে হত্যা করে লাশ গুম করে। আসামীরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।
ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানায় অপহরণ করে হত্যা করে লাশ গুম করার ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।