সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
ইন্টারনেট : দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগ বলে আসছে জামায়াত ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে তারা। কিন্ত বিএনপি আওয়ামী লীগের কথায় কান দেননি। আর এই শর্তেই আটকে ছিল রাজনৈতিক সংলাপ।
১৪ জুলাই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ দেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিএনপিকে জনমত তথা জাতীয় ঐক্য গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতারা। একইসঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে তাদের অতীত ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, জামায়াত যদি সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসে তাহলে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করতে হবে। এতে দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন। বেগম খালেদা জিয়াও জামায়াত প্রশ্নে অনেক নমনীয় হয়েছেন।
দেশে দুইটি জঙ্গি হামলার পর আওয়ামী লীগ বলে আসছেÑ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক জামায়াত ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। বিষয়টি জোটের খাতিরে এতদিন কর্ণপাত করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতার সর্বশেষ আলোচনায় সংলাপের শর্তে জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি। তবে জাতীয় সংলাপ ও তার কাক্সিক্ষত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত না পেলে এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে না সংসদের বাইরে থাকা এ বৃহৎ রাজনৈতিক দলটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলী ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের স্পষ্ট বক্তব্য- বিএনপি ঐক্য চাইলে ঐক্য হবে। তবে আগে জাতির কাছে মা চেয়ে জামায়াত ছাড়তে হবে। তাহলে আমরা চিন্তা করে দেখব বিএনপির সঙ্গে ঐক্য বা সংলাপ করব কী করব না। বিএনপির সংলাপ দাবিতে একই শর্ত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে উলেøখ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, অনেকদিন ধরেই বিএনপির কয়েক শীর্ষ নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা বরাবরই তাদের সংলাপ-সমঝোতার প্র¯Íাব ফিরিয়ে দিয়েছি। বিএনপির অবরোধ চলাকালীনও দলটির অনেক নেতা জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনী সংলাপ চেয়েছিল। আমরা বারবার তা নাকচ করে দিয়েছি। গ্রেপ্তার এড়াতেও বিএনপির অনেকে সমঝোতা চেয়েছিল। তাছাড়া আমরাও বিএনপিকে বারবার সতর্ক করেছি- জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদপুষ্ট জামায়াত পরিহার করতে। কিন্তু তারা তা না শুনে বারবার সংলাপ, সংলাপ বলে আসছিল। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও অনেকেই বিএনপির সংলাপ-শর্তস্বরূপ জামায়াত ত্যাগ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছে। জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে বিএনপির অনেক নেতা দ্বৈত আলোচনায় একমত পোষণ করেছেন। বিষয়টি দলীয় ফোরামেও আলোচনা করার কথা আওয়ামী লীগকে অবহিত করেছেন। সংলাপ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলেই জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপির নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গণমাধ্যকে বলেন, এখন বিএনপিসহ প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি সংলাপ বা আলোচনা জরুরি। দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা পেতে এটা আমরা করতেই পারি।
বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কথা বলে আসছে। এর মানে কিন্তু এই নয় যে এই মুহূর্তে সংলাপ করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া কিংবা নির্বাচন দেওয়া। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বিএনপিকে সতর্ক করছি-আপনারা জঙ্গি লালন করছেন। আপনাদের কোলে-পিঠে চড়ে জামায়াত দেশের সন্ত্রাস কায়েম করছে।
কিন্তু তারা জামায়াত বন্ধনে থেকে সংলাপ সংলাপ করছে। আমরা এখন একটি জাতীয় ঐক্য চাই। সেখানে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিক। তবে বিএনপিকে সংলাপ কিংবা জাতীয় ঐক্যে আসতে হলে জামায়াতের সঙ্গ অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতেও এখন আলোচনা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গেও তারা বিষয়টি শেয়ার করেছে। আমরা তাদের জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছি। এখন দেখা যাক জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়।