ফুলবাড়িয়া নিউজ ২৪ডটকম : তিন অরের শব্দ (বিদায়), শব্দটি সত্যিই বেদনা ও কষ্টদায়ক। জনাব বনানী বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ফুলবাড়ীয়ায় যোগদান করেন ২০১৩সালের ১৩মার্চ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে এটাই তার প্রথম স্টেশন। এর আগে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ময়মনসিংহের অনেক সিনিয়র সংবাদকর্মীদের মুখে ইউএনও বনানী বিশ্বাসের সুনামের কথা যায়।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় অফিস শুরুর প্রথমদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২য় তলায় একটি কর্মশালায় যোগদান করেন ইউএনও বনানী বিশ্বাস- ঐ প্রোগ্রামে পরিচয় (ইউএনও) হয় ফুলবাড়ীয়া থেকে নির্বাচিত মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. মোসলেম উদ্দিন এডভোকেট এর সাথে।
এরপর থেকে তিনি ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরকে পর্যায়ক্রমে গোছাতে শুরু করেন। সকল মানুষই তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকেন, আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারী করে পুরো পরিষদকে আয়ত্বে এনে ধারাবাহিকভাবে কাজ শুরু করা। একটা সময় ছিল যারা উপজেলা পরিষদের ভেতরে (কোয়াটারে) থাকেন, তারা বৃষ্টি আসলেই বার্মিজ জুতা নিয়ে অফিসে আসতেন, কেননা সামান্য বৃষ্টিতেই কোয়াটারের রাস্তা তলিয়ে যেত হাঁটুজলে। এ নিয়ে অনেক নিউজও ছাপা হয়েছিলো অনেক পত্র-পত্রিকাতে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়েছে কাজ হয়নি। আপনি এর গুরুত্ব অনুধাবন করায় এখন বৃষ্টি হলে বাচ্চারা পর্যন্ত রাস্তায় বেরিয়ে আসে খেলা করতে। কোয়াটারে বসবাসকারীদের সীমানা ছিল বাসা থেকে রাস্তা। কারণ সামনের মাঠটি জঙ্গলে ভরপুর ছিল যেখানে দিনের বেলাতে শেয়ালের আনাগোনা ল্য করা যেত প্রায়শঃ। এখন সেখানে বসেছে বাচ্চাদের খেলা করার দোলনা, শুধু তাই নয় এখানে এখন জাতীয় সকল দিবস অনায়াসে পালিত হচ্ছে। সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য নামমাত্র ছিল শিল্পকলা একাডেমী- আর এখন নিয়মিত চর্চা হচ্ছে, বেরিয়ে আসছে অনেক প্রতিভাবান। আর অফিসার্স কাবের অবস্থা ছিল শোচনীয়। কোন অফিসার কবে আসত, আর কবে
যোগদান করত তা টের পাওয়াই কঠিন ছিল। সেই অবস্থাত্হে; যে সতেজতা ফিরে এসেছে তা সত্যিই কর্মরতদের উৎসাহিত করে। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বসে উপরের দিকে তাকালে আকাশ দেখা যেত আয়নার মতো, আর ফ্যানের ঘ্যার ঘ্যার শব্দে মাইক ছাড়া কোন কথাই বুঝা যেত না- বারান্দা দিয়ে হাঁটা দায় ছিলো গরুর ঘুমঘর হওয়ায়। সেই মিলনায়তন এখন আধুনিক একটি মিলনায়তন।
উপজেলা পরিষদের সামনে একটি ফুলের বাগান ছিলো সবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, বাগানের সবগুলো গাছে এখনো ফুল আসেনি। আর ক’দিন পরেই ফুল আসবে, গন্ধে মুখরিত হবে উপজেলা পরিষদ চত্বরের অফিসগুলো। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের বাস ভবনের দিকে তাকালে নান্দনিক বললে ভুল হবে না। রাতের বেলায় বিভিন্ন রঙের বাতির আলোয় আলোকিত বাসভবন গেইট। সঠিক দিক নির্দেশনায় জাতীয় দিবসগুলো দিনব্যাপী পূর্ণতা পেয়েছিল বিগত ৪বছরের অধিক সময়। অকালে ঝড়ে যাচ্ছিল একজন কচি বয়সের মাধ্যমিক লেভেলের ছাত্রের প্রাণ, আল্লাহর উপর ভরসাকারী বাবা-মাকে নিয়ে তাতে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে পিছপা হন নি জনাব বিশ্বাস। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত নারী-পুরুষ, ভাল মানুষকে উৎসাহিত আর খারাপ মানুষকে তিরস্কৃত করে আপনি ফুলবাড়ীয়াকে মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. মোসলেম উদ্দিন এডভোকেট এর পরামর্শে ঢেলে সাজাতে অতি ব্যস্ত সময় দিচ্ছিলেন।
আপনার কাজে বুঝা যায়নি আপনি অন্যদের জন্য করছেন। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সকল সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বস্তরে আপনাকে হারাবার একটা আভাস দেখা যাচ্ছে। আপনি জনাব বনানী বিশ্বাস চৌকস, দ ও কর্মঠ প্রশাসক ছিলেন। আপনি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন, যাবেন। আপনাকে পূনরায় আমাদের উপজেলায় পাবার সম্ভাবনা নেই, আপনার মঙ্গল কামনা ছাড়া আর পথ খোলা নেই। তবে আমাদের প্রত্যাশা আপনি পদোন্নতি নিয়ে ময়মনসিংহে চাকুরী করবেন এবং সেই সুবাদে আপনি ফুলবাড়ীয়ায় মাঝে মধ্যে আসবেন; কোন এক ফাঁকে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে আমাদের। আপনিও দেখে যেতে পারবেন আপনার সময়ের কাজ আমরা কিভাবে ব্যবহার করছি। তিন অরের শব্দের বাহিরে কোন প্রাণিই নয়, আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। আপনি এখন যে স্টেশনে যাচ্ছেন, সেখান থেকেও আপনাকে এ শব্দেই চলে আসতে হবে। তবে আপনি আগত সকল স্টেশনগুলো আমাদের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার চেয়ে আরও সমৃদ্ধিতে ভরে দিবেন এটাই আমাদের কামনা। বেঁচে থাকলে হয়তোবা দেখে যেতে পারব আপনার গাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পত পত করে উঁড়ছে। আপনার গাড়ি অবিরত অগ্রসর হোক জয়ের পথে ।
সম্পাদনায়- আব্দুস ছাত্তার
আপনার মতামত লিখুন :