বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
ফুলবাড়িয়া নিউজ 24ডটকম : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে সারাদেশে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রবল ঝড়োহাওয়ায় অন্তত ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা ভোলার তজুমদ্দিন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ২ জন মারা গেছে।
এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে খানিকটা এগিয়ে আসায় তা আজ শনিবার দুপুরেই দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশে উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে। তারা বলছেন দুপুরের মধ্যেই এটি বাংলাদেশের চট্রগ্রাম বরিশাল উপকূল অতিক্রম করবে।
সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্রগ্রাম থেকে ৩৯০, কক্সবাজার থেকে ৩৭৫ ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। ঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর ‘বিপদ সংকেত’ দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারকে দেখাতে বলা হয়েছে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত সংকেত।
ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে ঊপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আগেই। ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ৪ থেকে ৫ ফুট জলোচ্ছাসে প্লাবিত হবার খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে আসছে। ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এর আগে বলা হয়েছিল ঝড়টি যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে শনিবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের গতি বৃদ্ধি পেয়ে তা আরো এগিয়ে আসায় এটি এখন দুপুরেই উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেসবাহউদ্দিন জানান, ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসাবে উপকূলীয় এলাকাগুলোয় সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করার পর তারা আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে সরে গিয়েছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজেরা মাঠে মাঠে ঘুরে সবাইকে সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার বিষয়াদি তদারকি করছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুদ রয়েছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং স্বেচ্ছাসেবীদেরও এ কাজে সহায়তা করছে। একই ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী সহ অন্য উপকূলীয় জেলাগুলোতেও।
শুক্রবার বিকাল থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ। ঝড়ের প্রভাবে এর মধ্যেই শ্রীলংকা এবং ভারতের ওড়িশাসহ পূর্ব উপকূলে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশের ভোলার প্রত্যন্ত একটি উপকূলীয় থানা, লালমোহনের একজন বাসিন্দা মোঃ. ইউসুফ বলছেন, শুক্রবার দুপুর থেকেই ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা খাবার দাবার সংগ্রহ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে সরে যেতে শুরু করেছে।
সাত নম্বর সংকেতের পরই সাধারণত মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলছেন, সাইক্লোনিক ঝড়ের যে গতি থাকে, এটাও সেরকম গতিতেই আসছে। হয়তো এটা মাঝারি ধরণের ঘূর্ণিঝড় হবে। এটির ঝড়ো আকারের বাতাসের গতিবেগ হবে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ছোটখাটো মাত্রার ঝড় হলেও, সর্বশেষ বড় আকারের ঘূর্ণিঝড়, সিডরের শিকার হয়েছিল ২০০৭ সালের নভেম্বরে। সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল দুহাজারের বেশি মানুষ।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলছেন, এবারো ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সবরকম প্রস্তুতি তারা নিচ্ছেন।
-সংগৃহিত