বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছিল এক চির-উন্নত শির! যার এক হাতে ‘বাঁকা বাঁশের বাঁশরী’ আরেক ‘হাতে রণ-তূর্য’! বাংলা সাহিত্যের গতিপথ পাল্টে বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারা তৈরি করেন। উন্নত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন সাম্য আর মানবতার কথা। ধ্যান-জ্ঞান, নিঃশ্বাস-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনায় তিনিই সম্প্রীতির কবি, অসাম্প্রদায়িক মেরুদণ্ড। বলছি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা। আজ ১২ ভাদ্র রবিবার আমাদের চির দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম প্রয়াণবার্ষিকী। ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই কবি ১৯৭৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নজরুলের সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে প্রেম, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় ভেদাভেদের প্রাচীর ভাঙার ঘোষণা দেন তিনি। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে বাংলা কাব্যে এক নতুন ধারার জন্ম দেন তিনি- ইসলামি সংগীত তথা গজলের। নজরুল প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন, যা নজরুল সংগীত হিসেবে পরিচিত।
কাজী নজরুল ইসলাম একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবার বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় নজরুলের জন্ম। তার জীবনকাল ৭৭ বছরের হলেও তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। নজরুলের এই ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সকাল ৯টায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে নজরুলের ভক্তি-রসের গান নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এ উপলক্ষে বিকাল সাড়ে ৫টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে আলোচনাসভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আজ আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে সকাল ৮টায় একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।