কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল! শিক্ষক নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য


প্রকাশের সময় : জুন ১৭, ২০১৬, ১১:০৫ AM / ৪৭
কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল! শিক্ষক নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য

images-01

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ৩টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯জন শিক্ষকের নিয়োগ ও এমপিও’র আবেদন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ! বিদ্যালয়গুলোতে এ শিক্ষকদের উপস্থিতি, নাম-পরিচয় জানে না কেউ! উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়াপত্র দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্রিয় একটি চক্র!

সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার সহনাটী আব্বাসিয়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথিত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯ ডিসেম্বর/১৫ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-১ অধিশাখার উপ-সচিব নুজহাত ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত ৯জন ননএমপিওভূক্ত শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণের লক্ষ্যে জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের জন্য ময়মনসিংহের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট পত্র দেন।

পত্রে যাচাই-বাছাই করার জন্য শিক্ষকদের নাম সহনাটী আব্বাসিয়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক মো. বুলবুল ইসলাম, মো. আব্দুস সাত্তার, মাওহা নয়ানগর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. ছাবিনা ইয়াসমিন, সহকারী শিক্ষক মোছা. রাবিয়া খাতুন, তাহমিনা আক্তার তানিয়া ও কুমড়ি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহকারী শিক্ষক মোছা. শরিফা বেগম ও আফসানা হোসেনের নাম প্রেরণ করা হয়। বিদ্যালয়গুলোর সাড়ে ৬শ ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির কেউ চিনে না। এ তিনটি বিদ্যালয় ১ম ধাপেই জাতীয়করণকৃত এবং প্রধান শিক্ষক হিসাবে যথাক্রমে মোহাম্মদ ইলিয়াস, মো. আব্দুল কদ্দুছ ও মো. আব্দুল মান্নান দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের একটি শক্তিশালী চক্র প্রধান শিক্ষক পদে ১৫লাখ ও সহকারী শিক্ষক পদে ১০লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে চাকুরী জাতীয়করণের জন্য জোর তৎপরতা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঐ চক্রটি শিক্ষকদের ২০০৯সন থেকে যোগদান ও শিক্ষক পিন নম্বর দিয়ে আবেদন করে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরিত পত্রটি যাচাই-বাছাই করার জন্য গৌরীপুর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।

গত ২২ মে শনিবার মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রধান শিক্ষকগণের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত হন। তার উপস্থিতিতেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ জানান, এসব ভুয়া।

অথচ তারই স্বাক্ষরে ২ মে তারিখে ২৪১নং স্মারকের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরিত পত্র নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই সুপারিশপত্রে আবেদনকারী প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলামের স্থলে শিরিনা খাতুনের নাম লিখে জাতীয়করণের লক্ষে পত্র প্রেরণ করেন। স্বাক্ষরকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও ২৫ মে বদলী হয়ে জামালপুর জেলার ইসলামপুরে বদলী হয়ে চলে যান। তিনি বলেন, পত্রে দেয়া স্বাক্ষর আমার নয়। এ দিকে ফাইলে রক্ষিত স্বাক্ষরের সঙ্গে এ পত্রের স্বাক্ষরের মিল রয়েছে বলে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন নিশ্চিত করেন।

২৪১নং স্মারকটি ৩১মার্চের। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দূর-রে-শাহওয়াজ বলেন, আমি ২মার্চ পর্যন্ত গৌরীপুরে ছিলাম ও ১৩মার্চ তারিখে স্বাক্ষর দেয়ার প্রশ্নই আসে না, এ স্বাক্ষর জাল। এ কমিটির অপর সদস্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার স্বাক্ষরও জাল।

এই জালিয়াত চক্রের কারণে ৩টি বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। শতভাগ জালিয়াত চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ট শুধু গৌরীপুরে নয় সারাদেশেই এই নেটওয়ার্ট ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার বলেন, ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে যে চক্রটি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।