বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

‘আমি সেই হতভাগা শিক্ষক’

032057Pic-14-550x367ফুলবাড়িয়া নিউজ 24ডটকম : ধর্ম অবমাননার সাজানো অজুহাতে লাঞ্ছনার শিকার নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছার পর শ্যামল কান্তি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের সেই হতভাগা শিক্ষক। ভালো চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছি।’ এরপর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও স্টাফরা দ্রুত তাঁর চিকিৎসা ও ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেন।
চিকিৎসকরা জানান, শ্যামল কান্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এনামুল করিমের অধীনে ১ নম্বর ইউনিটের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ নম্বর শয্যায় ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক কিছু সমস্যার পাশাপাশি তিনি মানসিক সমস্যায়ও ভুগছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সোহেল রানা বলেন, শ্যামল কান্তি হাসপাতালে এসে বলেছেন, তাঁর সারা শরীরে ব্যথা। তাঁর মাথা ঘুরছে এবং বুকেও ব্যথা করছে। খাবারে অরুচি বলেও জানিয়েছেন তিনি। আগে একবার হূদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই শিক্ষক। ডায়াবেটিসও আছে।

ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন শ্যামল কান্তি গতকাল বলেন, ‘সারা শরীরে অনেক ব্যথা অনুভব করছি। ওই সময় আমার হুঁশ তেমন ছিল না। হয়তো আমাকে অনেক মারধর করেছে তারা। এখন অনেক সমস্যা অনুভব করছি।’

এক চিকিৎসক বলেন, ‘হাঁটু, হাড়সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা করছে বলে দাবি করেছেন এই শিক্ষক। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁর শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যাই বেশি। নিরাপত্তাহীনতা ও অপমানবোধের কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। হূদরোগ ও ডায়াবেটিসের কারণে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

ঢাকায় আনার আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন শ্যামল কান্তি। ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামল কান্তির স্ত্রী একটি আবেদন করেন। এতে বলা হয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি তাঁর স্বামীকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নিতে চান। পরে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, তাঁরা পুলিশি পাহারায় শ্যামল কান্তিকে ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছে দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীকে মারধর ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অজুহাতে গত ১৩ মে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবোস করানো হয় শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে। এর আগে তাঁকে মারধরও করা হয়। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই দিনই খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া কয়েক দিন ধরেই দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত বুধবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগের সত্যতা পায়নি ওই তদন্ত কমিটি। কমিটি বলেছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই শিক্ষককে অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। এ জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বাতিল এবং ওই প্রধান শিক্ষককে নিজের পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের এই শিক্ষককে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে শিক্ষক সংগঠনগুলোর ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাজাহান আলম সাজু সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। আমাদের সময় ডটকম

Please Share This Post in Your Social Media

কপিরাইট © ফুলবাড়িয়ানিউজ২৪ ডট কম ২০২০
Design & Developed BY A K Mahfuzur Rahman