নিজকে আমি ভীষন সৌভাগ্যবান মনে করি।কর্মজীবনে মানুষ ইচ্ছে করলেই সুবিধাজনক জায়গায় সবসময় থাকতে পারেনা।কিন্তু এই জায়গাটাতে আমি বরাবরই ভাগ্যবান। আমি সবসময় পরিবারের সাথে থাকতে চেয়েছি।এবং সেটা অনেকাংশে সফলও হয়েছি।যদিও আমি যে জায়গা গুলোতো কাজ করেছি সেগুলো কোন ডেজায়ার পোস্টিং নয়।তাই আমার ঐ জায়গাগুলোতে ঢুকতে কোন অসুবিধা হয়নি।
২০১২ সালের ১৩ মার্চ আমি ফুলবাড়ীয়াতে প্রথম উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করি।এই প্রথম মাথার উপর অভিভাবকহীন একটি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করি।যেখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আমাকে একাই করতে হবে।আমি ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে নিজের অফিস রুমে প্রবেশ করলাম।অফিস সহকারীদের মাধ্যমে উপজেলার খোঁজখবর নিচ্ছিলাম।একটু পরেই দেখি উপজেলা চেয়ার ম্যান জনাব আনোয়ার হোসেন বাদশা ও প্রায় সকল অফিসার মিলে আমার রুমে এসেছে। হাতে ফুল আর একটি গিফটের প্যাকেট।সদা হাস্যালপী মিষ্টি একটি মানুষ, সাথে একঝাক ব্রাইট ও তরুন কর্মকর্তা আমাকে স্বাগত জানাতে এসেছে।আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ়।বুঝতে পারছিলামনা কি করা উচিত।অভিজ্ঞতার অভাব।তারাও আমাকে অবজার্ভ করেছে।এত বড় চেয়ারের যোগ্যতা নিয়ে তারা সেদিন কিছুটা হয়তো সংকিত ও ছিল।কেননা আমার চেহারায় এত বড় চেয়ারকে ধরে রাখার মত ছাপ ছিলনা সেদিনও।আমি আমার প্রবেশন অফিসারের সরলতা তখন ও ধরে রেখেছিলাম।চেয়ারম্যান জনাব আনোয়ার হোসেন বাদশা কিযে মিষ্টি দেখতে।তারউপর পান খেয়ে মুখটাকে আরো মিষ্টি করে রেখেছে।সাথে ভাইসচেয়ারম্যান বিপ্লবী নেতা কবির হোসেন আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাতৃরুপী মাজেদা আপা। আমাকে বরন করে নিলেন। আমি বুঝতেই পারলামনা কয়েকঘন্টা আগেও তারা আমার অপরিচিত ছিল।একঝাঁক তরুন অফিসার।কিযে উজ্বল তাদের চেহারা। নতুন জায়গা, নতুন আবহ আমাকে কিছুটা সন্ত্রস্ত্র করেছিল।কিন্তু সকল তরুন অফিসারদের চোখে দেখেছি সহযোগিতা।তারা বলেছে একদম চিন্তা করবেননা।আমরা আপনার সাথেই আছি।সকল অফিসারদের নাম বলা একটু কঠিন।কিন্তু একজনের নাম না বললে একটু অন্যায় হয়ে যাবে। উপজেলা কৃষিঅফিসার জনাব আহসানুল বাসার। সিনিয়র কর্মকর্তা।তার মিসেস অন্য স্টেশনে আমার সহকর্মী ছিল।তাই সে আমার পূর্বপরিচিত ছিল।আমি অজান্তেই তার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম।আমাকে আশ্বস্ত করল। একদম ভয় পাবেননা।এখানকার লিডার মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য অত্যন্ত ভালো মানুষ। আমরা এখানে সবাই খুব ভালো আছি।আপনিওভালো থাকবেন।
প্র্থম দিনের অর্ধেকটা পার করলাম সবার সাথে পরিচিত হতে।বিকেল চারটায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির মিটিং ছিল।স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট জনাব আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দীন এমপি মহোদয়।উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেব এটি আমার প্রথম সভা।সভাপতি মহোদয় আমাকে স্বাগত জানালেন।আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।আমি অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি।একজন এমপির ক্ষমতা ও মেজাজ সম্পর্কে একটা কমন ধারনা আমার ছিল।তিনি কেমন হবেন?আমি অবাক বিস্ময়ে তাকে দেখছি।নারীবান্ধব কর্মকর্তা বান্ধব একজন মানুষ।আমাকে তিনি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।কি মিষ্টি তার ব্যবহার।তাকে দেখে আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটছিলনা।আমার সাথে আমার হাজব্যান্ড গিয়েছিল।খুব সুন্দর করে বললেন তারা দুজন তাদের জীবন সংগী।আজও ভুলিনি তার সেই কথাগুলো।এখান থেকই শুরু হল রাজনৈতিক নেতাদেের সাথে আমার পথচলা।সেই থেকে দীর্ঘ চার বছর আঠার দিন আমি ফুলবাড়ীয়াতে কাজ করেছি।অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ আমি পূর্ন বিকশিত পাবলিক সার্ভেন্ট।মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আমার জীবনে দেখা এক অনন্য সাধারন মানুষ।আমি তার সম্পর্কে বিশদে যাবো আর ও পরে।
(চার বছরের কর্মরত বর্নিল জীবনের উপর আমার এ লেখা ধারাবাবাহিকভাবে চলবে।)
আপনার মতামত লিখুন :