নির্বাচনী হালচাল: টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আ’লীগ-বিএনপিতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৪, ২০১৭, ১০:৫৯ AM
নির্বাচনী হালচাল: টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আ’লীগ-বিএনপিতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী

20864495_1861051850879084_280254022_n

মো. নজরুল ইসলাম, মধুপুর (টাঙ্গাইল) : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে টাঙ্গাইলÑ১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। প্রথমদিকে এ আসনটি বিএনপির দখলে থাকলেও স্থানীয় হেভিয়েট প্রার্থীর অভাবে তা আওয়ামীলীগের দখলে চলে যায়।
১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৩টি আসন পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলী সরকার গঠন করলেও মধুপুরের এ আসনটি তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। তখন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাবু মহেন্দ্র লাল বর্মণকে (নৌকা) প্রায় ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন জাসদের মো. আবদুস সাত্তার (মশাল)।
১৯৭৯’র দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী কাজী আসাদুজ্জামকে (নৌকা) প্রায় ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী ধনবাড়ির নওয়াব সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী (ধানের শীষ)।
১৯৮৬’র তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না আসায় আওয়ামীলীগের ডা. নিজামুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। ৮৮’র নির্বাচনেও বিএনপি না আসায় খন্দকার আনোয়ারুল হক (স্বতন্ত্র) এমপি নির্বাচিত হন।
টানা দুইবার বিএনপি সংসদ নির্বাচনের বাহিরে থাকায় ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আশিকা আকবরকে (ধানের শীষ) মাত্র ২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন আওয়ামীলীগের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার নৌকা)। সাবেক রাষ্ট্রপতির নাতি প্রথম এমপি হয়ে আওয়ামীলীগ সরকারে পররাষ্ট্রপ্রতি মন্ত্রী হন।
৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম তালুকদার এমপি হন। একই বছর ১২ জুনের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার (নৌকা) প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম তালুকদারকে (ধানের শীষ) পরাজিত করেন।
পররাষ্ট্রপ্রতি মন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মিদের আন্দোলনের মুখে মধুপুর ছাড়তে হয়।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে আসেন নতুন মুখ।ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের মৃত্যুতে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন তারেক রহমানের সহযোগী ব্যবসায়ী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তৎকালিন বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল গফুর মন্টু মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক। ঐ নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক নৌকা) ৯৮,৪১৩ ভোট পেয়ে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপির ফকির মাহবুব আনাম স্বপন (ধানের শীষ) পান ৪০,৯৭২ ভোট অপরদিকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল গফুর মন্ট‍ু পান ৫৩,৫৩৯ ভোট। ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথমেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক (নৌকা) প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে (ধানের শীষ) পরাজিত করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিন হয়ে ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশনের দলের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন ড. আব্দুর রাজ্জাকের মাতৃত্ববোন শামসুন নাহার চাঁপা ।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও দলের একাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার আলম খান আবু,সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল করিম ও স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। দলীয় একটি সূত্র জানিছেন, ড. আব্দুর রাজ্জাককে ঢাকার কোনো একটি আসন দিয়ে এ আসনে শামসুন নাহার চাঁপাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম স্বপন মধুপুর-ধনবাড়ির জনগণের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ না করায় দলীয় ভোট কমতে থাকে। গত দেড় যুগে স্থানীয় সমাজ সেবামূলক কোন কর্মকান্ডে তাকে দেখা যায়নি। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন স্থানীয় যে কোন লোককে মনোনয়ন দিলে বিএনপির ভোটের সংখ্যা বাড়তে পারে। ফকির মাহবুব আনাম স্বপন ছাড়াও আগামী নির্বাচনে মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তিনবারের সাবেক পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম সরকার (শহিদ), সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও কানাডা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার ভূইয়া মাহবুব লতিফরও মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে সাবেক পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম সরকারকে (শহিদ) দলের মনোনয়ন দিলে হারানো আসনটি ঘরে তোলতে পারেন বিএনপি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিএনপিনেতা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন মূলত দলের ডোনার। তারা জানান গত দেড়যুগ তিনি নির্বাচনে যতটাকা খরচ করেছেন তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা মধুপুর থেকে ব্যবসা করে নিয়ে যাবেন। গত দেড়যুগ আগে মধুপুরের যে জমি যতটাকা দিয়ে কিনেছেন বর্তমানে সে জমির দামই প্রায় দশগুণ বেশি হবে।
এছাড়া সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারি সরকার শহিদের বড় ভাই চলচ্চিত্রকার নূরুল ইসলাম রাজ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মধুপুর উপজেলা শাখার সহসভাপতি মাও.জহিরুল ইসলাম দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসনের মধুপুর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৮শ ৫৩ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭ হাজার ৬শ ৬১ জন আর মহিরা ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ১শ ৯২ জন। ধনবাড়ি উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৪০ হাজার ৭শ ৬৫ জন। দুই উপজেলা মিলে এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬শ ৮ জন
মধুপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সংশোধদিত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই তালিকা অনুযায়ি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

https://www.bkash.com/