গৌরীপুরে জয়িতাদের জীবনের গল্প


প্রকাশের সময় : মে ২৮, ২০১৭, ১১:১৪ AM
গৌরীপুরে জয়িতাদের জীবনের গল্প

zoyita nari yeasmin

মশিউর রহমান কাউসার, গৌরিপুর : ছোটবেলা থেকেই ইয়াসমিন আক্তারের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া অবস্থায় তাকে হোচট খেতে হয়। পিতার আদেশ মান্য করতে গিয়ে অনিচ্ছা স্বত্বেও আওলাদ হোসেনের সাথে ১৬ বছর আগে বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। বিয়ের পর দারিদ্রতার কারণে শ্বশুরবাড়ীতে তাকে এক কঠিন অবস্থার মুখোমুখী হতে হয়। শ্বশুরবাড়ীর এলাকাটি পাহাড়ী দরিদ্র এলাকা হওয়ায় সেখানে জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মস্থানের তেমন সুযোগ ছিল না। এর মধ্যেই তিন পুত্র সন্তানের জননী হন তিনি। ফলে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তাকে অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছিল। একপর্যায়ে ২০০৫ সনে শেরপুর ঝিনাইগাতি থেকে স্বামীকে নিয়ে তিনি চলে আসেন গৌরীপুর পৌরসভার পূর্বভালুকায় নিজ পিত্রালয়ে। এখানে এসে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ইয়াসমিন উপার্জনের চেষ্টা চালায়। বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নকশী কাঁথা ও কুটির শিল্পের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরী করে সামান্য আয় রোজগার শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে পোশাক তৈরী বিষয়ে চার মাসের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে যুব উন্নয়ন উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋন নিয়ে গৌরীপুর শহরের নুরুল আমিন খান সড়কে ঘর ভাড়া নিয়ে ‘মা লেডিস কর্ণার’ নামে তিনি স্থাপন করেন একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। পোশাক তৈরীর পাশাপাশি এতে বিক্রি করা হয় কুটির শিল্পের বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র। প্রথমে মন্দাভাব থাকলেও বর্তমানে তার ব্যবসায় আয়রোজগার ভালই হচ্ছে। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় অবহেলিত ও অসহায় নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদেরকে পোশাক তৈরী ও কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে ইয়াসমিন প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। সে আয় দিয়ে তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। সমাজ উন্নয়নে অবদানের জন্য গত বছরে ডিসেম্বর মাসে গৌরীপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক জয়িতা নারী হিসেবে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ইয়াসমিন বলেন জীবনে হতাশ না হয়ে অদম্য মনোবল ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থা থেকে মানুষের ভাগ্যকে পরিবর্তন করা সম্ভব। তার ভবিষ্যত স্বপ্ন এলাকায় একটি ক্ষুদ্র পোশাক তৈরীর কারখানা স্থাপন করে স্থানীয় অসহায় ও বঞ্চিত নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা।
অপর এক জয়িতা নারী হলেন গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর গ্রামের আবুল হাসেমের স্ত্রী আয়েশা খাতুন। যিনি নির্যাতনের বিভীষিকা ভুলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিয়ের পর নানা অভাব-অনটনের মধ্যেও আয়েশা তার স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। হঠাৎ একটি সন্ত্রাসী হামলায় তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। জমি সংক্রান্ত বিরোধে ভাসুর কর্তৃক এসিড নিক্ষেপের ফলে আয়েশা মারাত্মক দগ্ধ হন। এতে তার গলা ও হাত ঝলসে যায়। পরে ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচীর সহযোগিতায় এএসএফ থেকে উন্নত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়ীতে এসে ক্ষুদ্র ঋন নিয়ে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে শুরু করেন তিনি হাঁস মুরগী পালন। এর পাশাপাশি তিনি বাঁশ বেতের কাজ করে আয় রোজগার করতে থাকেন। বর্তমানে সে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। নির্যাতনের বিভীষিকা ভুলে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে স্বাবলম্বী হওয়ায় আয়েশাকে জয়িতা নারী হিসেবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক সংবর্ধিত করা হয়েছে।

https://www.bkash.com/