হাওরের বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ান: মায়া


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ১২:২৮ PM
হাওরের বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ান: মায়া

image-75947-1492942399ইন্টারনেট : পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার মতো পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসময় কোনো রাজনৈতিক দল এখনো হাওরের মানুষকে দেখতে যায়নি বলে অভিযোগও করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা শুধু মুখে মুখে কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আমি সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাব তারা যেন হাওরের বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ান।

রবিবার সচিবালয়ের নিজ দপ্তরের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উদ্দেশে মায়া বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বলব, আপনি তো অসুস্থ, হাওরে যেতে পারবেন না। তবে আপনার দলের অনেক মোটাসোটা লোক আছে, তাদের পাঠান। মানুষের কষ্ট দেখে আসুক। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। শুধু মুখে কথা বললে হবে না।

হাওরপারের জেলাগুলোর প্রধান ফসল বোরো ধান। কাটার উপযোগী হওয়ার আগেই পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয়ে পচে গেছে এই ফসল। মড়ক লেগেছে মাছে। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বানভাসী হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করে আসছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, হাওরে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার যথেষ্ট সক্ষমতা আমাদের আছে। যে সমস্যা হয়েছে, সেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই। কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না।

হাওর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে সরকার নগদ অর্থ ও চাল সহায়তা দেবে বলে জানান মন্ত্রী। আজ থেকে ১০০ দিন এই সহায়তা দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাওরপারের ছয় জেলার চারটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষকে মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা নগদ দেয়া হবে। আজ রবিবার থেকে এই সহায়তা কর্মসূচি চলবে ১০০ দিন। প্রথম কিস্তির সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে মোট ৩ হাজার ১২৪ মিট্রিক টন চাল ও ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, যা বিতরণ করা হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে।

মন্ত্রী জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগুস্ত জেলা সুনামগঞ্জের ৮৬ শতাংশ মানুষের ফসল নষ্ট হয়েছে। ওই এলাকার মানুষের চাহিদা ছিল তিন থেকে ছয় মাস খাদ্য দিয়ে সহায়তা করার। কিন্তু আমরা বলেছি, ওই এলাকার মানুষ যত দিন না স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, বা পরবর্তী ফসল না পাবে, তত দিন সহায়তা চলবে। ছাড়া ওএমএস ও ভিজিএফের মাধ্যমে ১০ টাকা, ১৫টা চাল দেয়ার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এর সুবিধা পাবে হাওয়ার এলাকার সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

জেলা অনুযায়ী চাল ও অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সিলেটে ৪২৮ মেট্রিক টন চাল ও ২৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দেয়া হবে ৫০ হাজার পরিবারকে। সুনামগঞ্জে ১০৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৭৫ লাখ টাকা পাবে ১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। হবিগঞ্জে ২৯ হাজার পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৩০৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ টাকা। মৌলভীবাজারের জন্য বরাদ্দ ৩৪৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা পাবে ১ হাজার পরিবার। কিশোরগঞ্জে ৫৫২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ ৫০ হাজার পরিবারের জন্য। নেত্রকোনায় ৪৪৮ মেট্রিক টন চাল ও ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবে ৫০ হাজার পরিবার।

ত্রাণমন্ত্রী জানান, হওয়ার এলাকার মানুষের সমস্যা ও সমাধান খুঁজতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। আর সব মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হলেন কমিটির সদস্য। এই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হওর এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে।

বানবাসী মানুষ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, এমন সংবাদ প্রচার করবেন না যাতে হওরের মানুষ আতঙ্কিত হয়।

https://www.bkash.com/