নতুন ভ্যাট আইন এখনই চাইছে না ব্যবসায়ীরা


প্রকাশের সময় : মে ১৭, ২০১৬, ২:৪১ PM
নতুন ভ্যাট আইন এখনই চাইছে না ব্যবসায়ীরা

1461336466

ফুলবাড়িয়া নিউজ 24 ডটকম :  রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হিসেবে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সরকার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। কিন্তু নতুন এই আইনটি এখনই চাইছে না ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিন সিটির ব্যবসায়ী ফোরাম আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।আর সমস্যা সমাধানে অর্থমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর)।

মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের প্রধান হাতিয়ার। বাংলাদেশে বর্তমানে আয়করের পরই ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। নিকট ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হবে ভ্যাট।

ওই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ও ভ্যাটের নানা জটিলতা দূর করতে আগামী অর্থবছরের শুর“ থেকেই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যা”েছ সরকার। যেখানে বিভিন্ন স্তরের পরিবর্তে সকল পণ্য ও সেবায় শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকছে। এনবি আর থেকে প্রাপ্ত এক হিসেবে দেখা যায়, নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে আমদানি পর্যায়ে প্রায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।

নতুন ভ্যাট আইনটি ২০১২ সালে পাস হলেও দীর্ঘ চার বছর পর তা কার্যকর হতে যা”েছ। নতুন আইনে ছোট-বড় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সমান হারে ভ্যাট দেয়ার বিধান রেখে বাতিল করা হবে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা। থাকছে না প্যাকেজ পদ্ধতি কিংবা ট্র্যাঙ্কেটেড (ট্যারিফ মূল্য) ব্যব¯’াও।

এ সকল জটিলতা নিরসনে ও ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে দুই বছর আগে সরকার একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। এনবি আরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদকে চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সহ-সভাপতি জসীম উদ্দিনকে কো-চেয়ারম্যান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

কমিটির সুপারিশে বাংলাদেশের বাস্তবতায় হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট রাখা ও প্যাকেজ প্রথা বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। এফবিসিসিআই ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভ্যাট আইন সংশোধনের পক্ষে ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় ভ্যাট আইন সংশোধন করে সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুই দফা চিঠি পাঠিয়েছেন এফবিসিসিআয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।

এরই মধ্যে নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন না করে বাস্তবায়ন হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে ব্যবসায়ী বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবি নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য ও সেবার মূল্য কয়েকগুন বেড়ে যাবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু ধারা সংশোধন না করে ভ্যাট আইন সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে অল্প কিছু খাত ছাড়া ১৫ শতাংশ হারে প্রায় সব পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ বাধ্যতামূলক হবে। আর এতে পণ্যের দাম বাড়বে। যেমন নতুন ভ্যাট আইন অনুসারে ছোট মাপের একটি খাবারের দোকানকে এই হারে ভ্যাট দিতে হবে। ১০০ টাকার তরকারি ১১৫ টাকায় কিনতে হবে ক্রেতাকে। বিপাকে পড়তে হবে অনলাইন ক্রেতাদেরও। বর্তমানে অনলাইন পণ্য ও সেবায় ৪ শতাংশ ভ্যাট আরোপ থাকলেও ভ্যাট আইন সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হতে যা”েছ।

¯’াবর সম্পত্তি, ইজারা, যে কোন লাইন্সেস, পারমিটসহ আমদানি, উৎপাদন, ব্যবসায়ী পর্যায়ে পণ্য ও সেবার অন্তত ৫৩৬টি খাতে ভ্যাট আরোপ রয়েছে। ব্যতিক্রমী অল্প কিছু খাত ছাড়া সব খাতেই ভ্যাট আরোপ হবে। ভ্যাট আইনানুসারে সম্পূরক শুল্ক কমানোর ফলে আসছে অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তবে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানোর ফলে সরকার ক্ষতি পুষিয়েও বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে। কিš‘ নিত্যপণ্যের ওপর প্রায় সব খাতেই দাম বাড়ছে।

অন্যদিকে নতুন ভ্যাট আইনে ১ জুলাই থেকে প্যাকেজ ভ্যাটের বিধান বাতিল হওয়ায ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বেন বলে দাবি করছেন। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ বাড়াতে পারে।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ভ্যাট নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে এনবি আরের আলোচনায় যেসব প্রস্তাবনার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছিল তার কোনটিই নতুন আইনে প্রতিফলিত হয়নি। অথচ এ আইন নিয়ে আলোচনার সময় এনবি আর এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে সাতটি প্রস্তাবনা নিয়ে একমত হয়ে সই করেছিল।

আর এনবি আর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে আইনটি বাস্তবায়ন করা যাবে। তবে এরই মধ্যে কিছু আপত্তির কথাও শুনা যা”েছ। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে এনবি আর অর্থমন্ত্রী দিক-নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।

https://www.bkash.com/